Home » রোমান সভ্যতার অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর
রোমান সভ্যতার অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর

রোমান সভ্যতার অবদান সম্পর্কে আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

প্রাচীন রোমান সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল প্রাচীন রোম নগরীকে কেন্দ্র করে। বর্তমান ইতালির পশ্চিমে দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরের উপকূলে রোম নগরী অবস্থিত। রোম নগরী সাতটি পার্বত্য টিলার উপর ছিল। নগরের চারিদিকে ছিল উর্বর সমতল ভূমি। এ সমতল ভূমিতে বাস করত ল্যাটিন উপজাতি। ল্যাটিন রাজা রোমিট্রলাস পত্তন করেন এক নগরী। তাঁর নামেই নগরীর নামকরণক করা হয় রোম। রোমবাসীরা কথা বলত ল্যাটিন ভাষায়। আজকের আর্টিকেলে রোমান সভ্যতার অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

রোমান সভ্যতার অবদান

রোমানরা গ্রীসের ভাষা, বিজ্ঞান ও শিল্পকলার সাথে ধীরে ধীরে পরিচিত হয়েছিল। তাদের এ পরিচিতি আরও বৃদ্ধি পায় যখন রোমবাসীরা গ্রীস দখল করে। অবশ্য রোমের সংস্কৃতি গ্রীসের শুধু অনুকরণ ছিল না-গ্রীকদের কাছে শিখে তারা নতুন অনেক কিছু সৃষ্টি করেছিল। নিচে রোমান সভ্যতার অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

১. বর্ণমালা সৃষ্টি

রোমানরা গ্রীক বর্ণমালার ভিত্তিতে লাতিন বর্ণমালা সৃষ্টি করে।

২. সাহিত্য

সাহিত্য রচনায় রোমান সভ্যতা অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতাকে ছাড়িয়ে গেছে। বিজ্ঞানী ও কবি লুক্রেৎ সিউস বস্তু প্রকৃতি নামে একটি কাব্য রচনা করেছেন। এ কাব্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃতি ও মানুষের ইতিহাস সম্বন্ধে লেখা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে বহু প্রতিভাবান কবি রোমে বাস করতেন। এদের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত কবি ছিলেন ভেগিলিউস। তাঁর মহাকাব্য  “ইনিস” বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ওভিদলিভি রোমীয় যুগের খ্যাতিমান দুই কবি ছিলেন।

আরও পড়ুন:   প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা বর্ণনা কর।

৩. দর্শন ও ইতিহাস

রোমের জনপ্রিয় দার্শনিক মতবাদের নাম ছিল ষ্টোয়িকবাদ। এ মতবাদ অনুসারে সুখ লাভের জন্যে প্রয়োজন শৃঙ্খলা, শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং সত্যবাদী হওয়া।

৪. স্থাপত্য শিল্প

রোমের বিশাল ও জাঁকজমকপূর্ণ ইমারতগুলো রোমীয় সাম্রাজ্যের শক্তি ও প্রাচুর্য্যের বহিঃপ্রকাশরূপে উপস্থিত। রোমে আবিষ্কৃত কংক্রীট স্থাপত্য শিল্পে তাদের নতুন অবদান। কংক্রীট শক্তভাবে পাথর জোড়া লাগাত। ফলে সে সময়ে খিলান ও নির্মাণ সম্ভব হয়েছিল। রোমীয় স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন ধর্ম মন্দির প্যান্থিত্তন।

ইহুদী জাতির ইতিহাস: আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ - Ihudi Jatir Itihas: Abdullah  Ibn Mahmud

TK. 600 TK. 480

৫. ভাস্কর্য শিল্প

রোমীয় ভাস্কর্যের অপূর্ব সাফল্য হল অবিকলভাবে মানুষের পূর্ণাবয়ব ও আবক্ষ মূর্তি নির্মাণ। এ মূর্তি নির্মাণে মানুষের মনোজগত মুখায়বে জীবন্তভাবে চিত্রিত করা। রোম সম্রাট, কর্মকর্তা ও দেবতাদের বহু মূর্তি পাওয়া গেছে যা রোমীয় ভাস্কর্যের নিদর্শন বলে মনে করা হয়।

৬. ধর্ম

রোমীয় ধর্মে গ্রীকদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। রোমে বহু ধর্ম মন্দির নির্মিত হয়েছিল। রোমবাসীদের প্রধান দেবতার নাম জুপিটার। নেপচুন, ভেনাস, মিনার্ভা তাদের অন্যতম দেব-দেবী ছিল।

অগাষ্টাস সিজারের সময়কাল থেকে সম্রাটদের ঈশ্বর বলে পূজা করা হত। শেষের দিকে রোমে খ্রিস্ট ধর্ম প্রসার লাভ করে। খ্রিস্টধর্ম সম্রাট পূজা সমর্থন করে না। ফলে প্রথম দিকে রোমান শাসকেরা খ্রিস্ট ধর্মের বিরোধী ছিল। দরিদ্র কৃষক, কারিগর ও দাসগণ খ্রিস্টধর্মকে জীবন ধারণের এক অবলম্বন মনে করে এবং রোম সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টধর্মের প্রসার লাভ করে। সমাজে বিশৃঙ্খলা নিরসনের জন্যে অবশেষে সম্রাট কনষ্টানটাইন খ্রিস্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দান করেন।

৭. আইন

যেহেতু রোম শাসন ব্যবস্থার বিরাট বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী দেশে পরিণত হয়েছিল তাই রোমানদের শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব প্রকাশ পায় তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে। রোমান আইন লিখিত এবং অলিখিত দু’ই ছিল। অভিজাতদের ( প্যাট্রেশিয়ান ) সাথে সাধারণ  নাগরিকের (পেণ্ঢবিয়ান) সংঘাতের ফলে সাধারণ মানুষের কল্যাণে আইন প্রণীত হতে থাকে। ১২টি ব্রোঞ্জ পাতে এ আইন লিখিত হয়। হেবিয়াস কোর্পাস নামে এ আইন পরিচিত ছিল। বেসামারিক আইন, জনগণের আইন এবং আইনের নতুন বিন্যাস-এ তিনটি শাখায় রোমান আইন বিকাশ লাভ করে। বেসামরিক আইন পালনে নাগরিকেরা বাধ্য ছিল। রোমান আইনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হত। এ আইন ছিল উদার ও মানবিক। এ আইনে বিধবা ও এতিমদের অধিকার সংরক্ষিত ছিল।

৮. রোমান সংস্কৃতির প্রভাব

রোমান সংস্কৃতির প্রভাব ইতালি ছাড়াও সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। যেখানে তারা গিয়েছে সেখানে তারা খিলান, জল সরবরাহ ব্যবস্থা, এ্যামিক থিয়েটার ও পথ নির্মাণ করত। দূর-দূরান্ত অঞ্চলে ল্যাটিন ভাষা ব্যবহৃত হত। প্রাচ্যের ও গ্রীসের বহু রচনা ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। পশ্চিম ইউরোপের শিক্ষিত ব্যক্তিরা এ ভাষায় লিখত ও পড়ত। খনিজ দ্রব্য, উদ্ভিদ ও পশু-পাখি ইত্যাদির নামকরণের সাধারণ ভাষা হল- ল্যাটিন।

পৃথিবীর সকল দেশের বিজ্ঞানীরা এ ভাষাতেই এগুলো চিনতে পারে। চিকিৎসকেরা এ ভাষাতেই এখনও ঔষধের নাম লিখে থাকেন। আধুনিককালের বহু শব্দ ল্যাটিন ভাষা থেকে এসেছে। রোমে তৈরি পঞ্জিকা পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যবহার করা হয়। ইংরেজি বার মাসের নাম ল্যাটিন ভাষা থেকে উদ্ভূত। লুক্রেৎসিউস, ভেগিলিউস এবং অন্যান্য রোমীয় লেখকদের রচনা ইউরোপীয় সাহিত্যকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে। রোমানদের লিখার গম্বুজ নির্মাণের কৌশল পৃীথিবীতে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশে অমূল্য অবদান রেখেছে। 

Related Posts