প্রত্যেক জাতির কাছে তার নিজের ভাষা খুব প্রিয়। আর পৃথিবীর সকল ভাষাকে সম্মান জানানোর জন্য চালু করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসের কথা। মায়ের ভাষার জন্য সংগ্রাম ও রক্তদান পৃথিবীর আর কোনো দেশের ইতিহাসে নেই। এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনাটি পড়লে তোমরা গৌরবময় ইতিহাসকে জানতে পারবে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কেও জানতে পারবে। এছাড়া এই রচনাটি তোমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুচ্ছেদ হিসেবেও পরীক্ষায় লিখতে পারবে। তখন শুধু পয়েন্টগুলো বাদ দিয়ে একটু সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে দিলে হবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনার সংকেত
ভূমিকা
মাতৃভাষা কি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য
উপসংহার
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
ভূমিকা
মানুষের জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিমেয়। প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পরিচয়ের সেরা কষ্টিপাথর মাতৃভাষা। মাতৃভাষা অবলম্বন করেই গড়ে উঠেছে বিশ্বের প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা । ১৯৫২ সালে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি বিশ্ব-ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারই স্বীকৃতি পেয়েছি আমরা শতাব্দীর শেষপ্রান্তে এসে। বিশ্ব এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদার স্বীকৃতি এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ।
মাতৃভাষা কি?
মাতৃভাষা হলো মায়ের ভাষা । মানুষ জন্মসূত্রে মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা আয়ত্ত করে সে ভাষাই হলো তার মাতৃভাষা। অর্থাৎ শিশু মায়ের কাছ থেকে প্রথম যে ভাষা শেখে, তাই তার মাতৃভাষা । আরও সহজভাবে বললে, একটি শিশু জন্মের পর তার মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা আয়ত্ত করে তাকে সেই শিশুর মাতৃভাষা বলে। আর এটি হলাে একটি জাতির স্বদেশি ভাষা। মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রতিটি জাতি, গােষ্ঠী তার স্বীয় স্বীয় ভাব আদান-প্রদান করে থাকে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ববাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা। তদানীন্তন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলার জনগণের ওপর সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তার করার পথ বেছে নেয়। তারা ঘোষণা করে – বাংলা রাষ্ট্রভাষা হবে না, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পাবে উর্দু, যা কিনা ছিল মাত্র ৭ শতাংশ লোকের’ মাতৃভাষা। এই অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয় সমগ্র পূর্ববাংলা। বাঙালি ঘোষণা করেছিল, সকল মাতৃভাষাই সমান মর্যাদা লাভের অধিকারী। তাই উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাকেও দিতে হবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির ন্যায্য দাবি নস্যাৎ করার জন্যে আন্দোলনরত ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালায়। এতে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। আন্দোলন আরও প্রচণ্ড হয়, গর্জে ওঠে সারা বাংলা। আতঙ্ক্ষিত সরকার বাধ্য হয়ে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে শহিদের স্মরণে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারির চেতনাই বাঙালিকে স্মাধিকার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। এই সংগ্রামের পথ ধরেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, “১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মাতৃভাষার জন্যে অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং সেদিন যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণার প্রস্তাব করা হচ্ছে।” আজ ভাষা দিবস কেবল আমাদের একার নয়, বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হয় এই দিন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
কানাডার প্রবাসী বহুভাষী জনের সংগঠন ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর পেছনে যে দুজন প্রবাসী বাঙালির অবদান রয়েছে তাঁরা হচ্ছেন আবদুস সালাম ও রফিকুল ইসলাম। বহুভাষী ভাষাপ্রেমিক ঐ সংগঠনের উদ্যোগে ১৯৯৮ সালের ৯ই জানুয়ারি জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে একটি চিঠি লেখা হয়। কফি আনান ইউনেস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ জানালে ইউনেস্কোতে একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়। ইউনেস্কোর শিক্ষা বিভাগের প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ বেসরকারি উদ্যোগে কোনো প্রস্তাব গ্রহণের অপরাগতার কথা জানান। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়। ২৭টি দেশ এ প্রস্তাবকে সমর্থন জানায়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩১তম সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের স্বীকৃতি পায়। যে দিবসটি কেবল ‘ভাষা শহিদ দিবস’ হিসেবে পালিত হত আজ তা ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য
ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ইউনেস্কোর সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে বলা হয় : সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য, বহুভাষাভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করবে না, তা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুধাবন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য হলো প্রতিটি মাতৃভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া, বিশেষ করে দুর্বল ও জীর্ণ মাতৃভাষাগুলিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা, দুর্বল বলে কোনো ভাষার ওপর প্রভুত্ব আরোপের অপচেষ্টা না করা। এ দিবসে প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে যেমন ভালোবাসবে তেমনি অন্য জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা দেবে। এভাবে একুশকে ধারণ করে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরণা পাবে মানুষ।
উপসংহার
আমাদের মহান একুশ আজ স্বদেশের আঙিনা পেরিয়ে পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মাতৃভাষার প্রেরণা। এখন আমাদের করণীয় হলো, জ্ঞানের সব ক্ষেত্রে বাংলাভাষার প্রয়োগ বৃদ্ধিতে সাধ্যমতো প্রয়াস চালানো। মাতৃভাষার শক্তি বাড়িয়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে নতুন শতকের জন্যে নিজেদের প্রস্তুত করা। বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারকে মাতৃভাষায় চর্চার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মাতৃভাষার সেবা করার পাশাপাশি বিশ্বের তাবৎ মানুষের মাতৃভাষার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই চেতনাকে সবার মধ্যে সঞ্জীবিত করার মধ্যেই নিহিত আছে এই মহান দিবসের সার্থকতা।
তো কেমন লাগলো রচনাটি? আশাকরি ভালো লেগেছে। এরকম আরও বিভিন্ন বিষয়ে রচনা, অনুচ্ছেদ, ভাব-সম্প্রসারণ ইত্যাদি পেতে তোমরা এই ব্লগের সাথে নিয়মিত থাকো। তাছাড়া কোন কোন বিষয়ে লেখা পেতে চাও তাও আমাকে লিখে জানাতে পারো Contact Us পেইজটির মাধ্যমে। আমি যতদ্রুত সম্ভব সে বিষয়ে লিখে তোমাদের দেয়ার চেষ্টা করবো।
আরও পড়তে পারো:
গ্রন্থাগার অনুচ্ছেদ অথবা জাতীয় গ্রন্থাগার রচনা
সংবাদপত্র রচনা || সংবাদপত্র অনুচ্ছেদ || সংবাদপত্র রচনা Class 7
কম্পিউটার অনুচ্ছেদ || কম্পিউটার রচনা
1 comment
[…] […]
Comments are closed.