Home » আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা
আমার প্রিয় কবি রচনা

আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা

by Susmi
1 comment

অনেকেরই অনেক প্রিয় কবি থাকেন। কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, কেউ বা গ্রামের সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরেন, কেউ রোমান্টিকতা, আবার কেউ শহরের নাগরিক সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরেন। আমার প্রিয় কবি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। কারণ তিনি সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছেন। নিচে রচনাকারে তুলে ধরলাম।

আমার প্রিয় কবি

ভূমিকা

যাঁর কবিতা আমাকে অভিভূত করে, যার কবিতা পড়ে আমি আপ্লুত হই, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্যে ধূমকেতুর মতো তাঁর আবির্ভাব। অন্যায়-অবিচার, জুলুম ও শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে প্রচণ্ড বিদ্রোহ। তিনিই শুনিয়ে ছিলেন সংগ্রাম ও বিপ্লবের কথা। জাতিকে দেখিয়ে ছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। এই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামই আমার প্রিয় কবি । এ কবির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে কৈশোরে পড়া একটি কবিতার মাধ্যমে-

“আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি।”

কেন প্রিয় কবি

ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হবার পর দেখলাম, আমাদের স্কুলে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালিত হচ্ছে। সেই অনুষ্ঠানে এক আবৃত্তিকারের উচ্চারণে তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতার আবৃত্তি শুনে আমি মুখ, অভিভূত। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সব কথা তখন বুঝিনি। কিন্তু যে কথাগুলো তখন বুঝেছিলাম তার সবগুলো কথাই যেন আমার মনের কথা। কিছু বুঝে কিছু না-বুঝে এর প্রতিটি শব্দ এবং পক্তির সাথে সেদিন আমি যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম।

গ্রীষ্মের ছুটিতে মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে দেখলাম, আমার ছোটমামার সংগ্রহে ‘নজরুল রচনাবলি’ রয়েছে। ছোটমামারও প্রিয় কবি নজরুল। ছোটমামী আমাকে নজরুলের জীবনের অনেক কথা শোনালেন। আবৃত্তি করে শোনালেন নজরুলের কবিতা। ‘খুকু ও কাঠবিড়ালী’, ‘লিচু চোর’, ‘খোকার সাধ’, ‘কুলি ও মজুর’, ‘সাম্যবাদী’ প্রভৃতি কবিতা। এভাবে আমার মনের মণিকোঠায় নজরুল হয়ে ওঠেন প্রিয় কবি। আরো একটু বড় হয়ে আমি নজরুলের আরো কবিতা ও গান শুনেছি। ‘সংকল্প’ কবিতায় তিনি লিখেছেন:

“থাকব না ক বন্ধ ঘরে
দেখব এবার জগষ্টাকে
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।”

এ যেন আমার কিশোরমনের কথা। আমারো মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় এই সীমাবদ্ধ গণ্ডিটা থেকে বেরিয়ে জগৎটাকে ঘুরেফিরে একটু দেখি। তাই আমি নজরুলকেই প্রিয় কবির আসনে বসিয়ে, তাঁকে শুদ্ধা নিবেদন করি। নজরুল ঘুণেধরা সমাজটাকে ভেঙেচুরে নতুন সমাজ গড়ার কথা বলেছেন। নজরুল আমার কাছে তাই,

‘বাবরি দোলানো মহান পুরুষ
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা,’

নজরুলের জীবনালেখ্য

কবি নজরুলের ব্যক্তিগত জীবন ছিল খুবই বৈচিত্র্যময়। তাঁর জন্ম ১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ছিল ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জায়েদা খাতুন। গ্রামের মক্তবেই তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। বাল্যকাল থেকে নজরুল কিছুটা খেয়ালি, বেপরোয়া, দুরস্ত ছিলেন। লেখাপড়া বাদ দিয়ে একসময় যোগ দেন গ্রামের লেটোর দলে । মাসিক পাঁচ টাকা বেতনে আসানসোলের এক রুটির দোকানে কাজ করেন। আসানসোলের তৎকালীন পুলিশের দারোগা রফিজউদ্দিন বালক নজরুলের প্রতিভার পরিচয় পেয়ে ময়মনসিংহে এনে তাঁকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। তিন বছর পর নজরুল সেখান থেকে পালিয়ে যান। শিয়ারশোল স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। নজরুল পড়ালেখা অসমাপ্ত রেখে বাঙালি পল্টনে গিয়ে সৈনিকের খাতায় নাম লেখান। কর্মদক্ষতার গুণে অল্পদিনের মধ্যে তিনি হাবিলদার পদে উন্নীত হন।

সৈনিক থাকা অবস্থায় করাচি থেকে তিনি কলকাতার পত্রিকায় লেখা পাঠাতেন। ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে তিনি কলকাতায় ফিরে এসে পত্রিকা সম্পাদনা ও সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’। এই কবিতাই নজরুলকে রাতারাতি খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দেয়। তিনি হয়ে ওঠেন বিদ্রোহী কবি। তারপর একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, গীতিগ্রন্থ, গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধগ্রন্থ। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘দোলন চাঁপা’, ‘সিন্ধু হিন্দোল’, ‘সর্বহারা’। তিনি ছোটদের জন্যও অনেক লিখেছেন। ‘ঝিলিমিলি’, ‘আলেয়া’, ‘পুতুলের বিয়ে’ তাঁর শিশুতোষ রচনা।

নজরুল ছিলেন ঔপনিবেশিক আমলের কবি। তাই ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে তিনি কবিতা লিখেছেন। তাঁর কবিতা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কবিতা লেখার অপরাধে তিনি জেলে গেছেন। তবু তিনি পিছপা হননি, সত্য-সুন্দর-ন্যায়ের কথা বলেছেন, জাতিকে শুনিয়েছেন মুক্তির গান—

‘প্রার্থনা কর যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস
যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ।’

নজরুল এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের মাধ্যমে তিনি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সদা সোচ্চার জাতিকে দেখান তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন। ১৯৪২ সালে নজরুল হঠাৎ এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে নির্বাক হয়ে পড়েন। তারপর দীর্ঘ তেত্রিশ বছর নজরুল নির্বাকই ছিলেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

উপসংহার

নজরুল সাম্যের কবি, সুন্দরের কবি। মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণতূর্য” – এ কেবল নজরুলের পক্ষেই বলা সম্ভব। কারণ, তিনি নিপীড়িত-লাঞ্ছিত মানুষের কথা ভেবেছেন। পরাধীন জাতির মুক্তির কথা বলেছেন। উপমহাদেশের ইতিহাসে একমাত্র নজরুলই কবিতা লেখার অপরাধে জেল খেটেছেন। নজরুল ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। তাই বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দিয়েছে আমাদের ‘জাতীয় কবি’র মর্যাদা। মহান এই কবিই আমার প্রিয় কবি।

অন্যান্য রচনা:

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা Class 7, 8, 9

কাজী নজরুল ইসলাম রচনা অথবা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা (১২৫০ শব্দ)

Related Posts

1 comment

Comments are closed.