Home » কর্মী সংগ্রহ কি? কর্মী সংগ্রহের উৎস কয়টি ও কি কি?
কর্মী সংগ্রহ কি কর্মী সংগ্রহের উৎস কয়টি ও কি কি

কর্মী সংগ্রহ কি? কর্মী সংগ্রহের উৎস কয়টি ও কি কি?

by Susmi
0 comment

যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সঠিক কর্মী সংগ্রহ একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, কর্মী সংগ্রহ সঠিক না হলে অযোগ্য ব্যক্তিতে প্রতিষ্ঠান ভরে গেলে প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো কর্মী সংগ্রহ কি এবং সঠিক, যোগ্য ও দক্ষ কর্মী কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন। অর্থাৎ, কর্মী সংগ্রহের উৎসসমূহ কি কি ইত্যাদি।

কর্মী সংগ্রহ কি?

প্রতিষ্ঠানে নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য কর্মীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে কর্মে আকৃষ্ট করার প্রক্রিয়াকে কর্মী সংগ্রহ বা কর্মী প্রবেশন বলে। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একদল দক্ষ ও উদ্যমী কর্মীবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও উদ্যমী কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে উপযুক্ত উৎস অনুসন্ধান করতে হয় এবং বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়। এ প্রক্রিয়াই কর্মী সংগ্রহ।

আরও পড়ুন:   সংগঠন কাকে বলে? সংগঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

এছাড়া কর্মী সংগ্রহ কি সে সম্পর্কে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। নিচে এরকম যুগোপযোগী দুটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-

১. আর, ডাব্লিউ. গ্রিফিন (R. W. Griffin)-এর মতে, “খালি পদে উপযুক্ত ব্যক্তিদের আবেদনের জন্য আকৃষ্ট করার প্রক্রিয়াই কর্মী সংগ্রহ।”

( Recruting is the process of attracting qualified persons to apply for the jobs that are open.)

২. এডউইন বি. ফ্লিপো (Eswin B. Flippo)-এর মতে, “কর্মী সংগ্রহ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সম্ভাবনাময় কর্মীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য আবেদন করতে অনুপ্রাণিত করা হয়।”

( Recruitment is the process of searching for prospective employees and stimulating them to apply for jobs in the organization.)

অতএব উপরিউক্ত সংজ্ঞাদ্বয় বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপযুক্ত উৎস থেকে যোগ্য, উদ্যমী ও সম্ভাবনাময় কর্মী অনুসন্ধান করে প্রতিষ্ঠানের কর্মে নিয়োগ লাভের জন্য তাদেরকে অনুপ্রাণিত করা হয় তাকে কর্মী সংগ্রহ বলে।

কর্মী সংগ্রহের উৎস কয়টি?

প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য ও উদ্যমী কর্মী সংগ্রহ করার জন্য কর্মী ব্যবস্থাপককে বিভিন্ন উৎসের সন্ধান করতে হয়। তবে, কি প্রকৃতির কর্মী প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন হবে তার উপর ভিত্তি করেই কর্মী সংগ্রহের উৎস নির্বাচন করা হয়। কর্মী সংগ্রহের জন্য সাধারণত দু’ধরনের উৎস ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যথা-

ক. অভ্যন্তরীণ উৎস (Internal Sources)

প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ, কর্মচারীদের পদোন্নতি, অবসর গ্রহণ কিংবা মৃত্যুজনিত কারণে কোনো পদ শূন্য হলে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কর্মীদের মধ্য থেকে এ পদ পূরণ করা হয়ে থাকে।

খ. বাহ্যিক উৎস (External Sources)

যখন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর্মী সংগ্রহ না করে অন্য কোনো উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয় তখন সে উৎসকে বাহ্যিক উৎস বলা হয়।

কর্মী সংগ্রহের অভ্যন্তরীণ উৎসসমূহ

১. পদোন্নতি

প্রতিষ্ঠানের উচ্চস্তরে কিংবা মধ্যম স্তরে কোনো পদ শূন্য হলে কিংবা কোনো পদ সৃষ্টি হলে বর্তমান কর্মীদের মধ্য থেকে পদোন্নতি দানের মাধ্যমে সে পদ পূরণ করা হয়।

২. বর্তমান কর্মীদের সুপারিশ

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কিংবা তাদের সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের নিয়োগ দানের মাধ্যমে কখনো কখনো প্রতিষ্ঠানের কর্মী সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

৩. শ্রমিক সংঘের সুপারিশ

যেসব বৃহৎ বা মাঝারি আয়তনের প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংঘ বিদ্যমান, সেসব প্রতিষ্ঠানে অনেক সময়ই শ্রমিক সংঘের সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের দ্বারা কিছু কিছু শূন্য পদ পূরণ করা হয়।

কর্মী সংগ্রহের বাহ্যিক উৎসসমূহ

১. বিজ্ঞাপন

বর্তমানে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, রেডিও টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহের আহ্বান জানায়। পরবর্তীতে দরখাস্তকারীদের মধ্য হতে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী নির্বাচন করা হয়ে থাকে।

২. চাকরি সন্ধানী

ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের কারণে বর্তমানে অনেক চাকরি সন্ধানী বেকার যুবক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবেদনপত্র জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানে কর্মীর প্রয়োজন হলে সেখান থেকেও কখনো কখনো কর্মী সংগ্রহ করা হয়।

৩. কর্মসংস্থান প্রতিষ্ঠান

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা বেসরকারি পরিচালনাধীন এজেন্সি যেমন- জনশক্তি ব্যুরো, কনসাল্টিং ফার্ম ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী সংগ্রহ করে থাকে। প্রার্থীরা ঐসব প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সিতে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে রাখে এবং প্রয়োজনের সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে কর্মী সংগ্রহ করে থাকে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ

পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষার্থীদেরকে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চাকরি প্রদানের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবে সম্মত হলে পড়াশোনা শেষ করে উক্ত শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মে নিয়োজিত হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়াই কর্মী সংগ্রহ করে থাকে।

৫. রেফারেন্স

প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মী ও তাদের বন্ধু-বান্ধব কর্তৃক সুপারিশ করা ব্যক্তিরাও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লক্ষ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।

৬. কর্মসংস্থান সম্পর্কিত তথ্য ভান্ডার

কোনো কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান চাকরি প্রার্থীদের বায়োডাটা সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করে এবং কম্পিউটারের অন-লাইন সার্ভিসের মাধ্যমে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট কর্মী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তথ্য সরবরাহ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় Career Placement Registry Inc. এরূপ একটি প্রতিষ্ঠান।

৭. বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র 

বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ কর্মীসংগ্রহের একটি অন্যতম উৎস। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর্মী সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

৮. মেধা শিকার

খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বল্প আয়সম্পন্ন কিংবা অধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশসমূহ থেকে কিংবা অপরাপর কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মেধাবী ও যোগ্য কর্মীদের মোটা অর্থ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দানের মাধ্যমে কর্মীসংগ্রহ করে থাকে। এটাকে ‘Brain Hunting’ বা ‘মেধা শিকার’ বলা হয়ে থাকে।

তো আমরা কর্মী সংগ্রহ কি তা জানলাম এবং কর্মী সংগ্রহের উৎস সম্পর্কেও অবগত হলাম। আশাকরি লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। এরকম লেখা আরও পেতে কমেন্ট করুন কমেন্ট বক্সে।

Related Posts