খনি থেকে উত্তোলিত সম্পদ হলো খনিজ সম্পদ। এটি প্রকৃতির দান। একটি দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নতিতে খনিজ সম্পদের অবদান অপরিসীম।
খনিজ সম্পদ
সাধারণভাবে বলতে গেলে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরভাগের শিলাস্তর হতে মাটি খুড়ে যে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করা হয় তাকে খনিজ সম্পদ বলে। খনিজ সম্পদ একটি অজৈব পদার্থ। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তর ভাগে শিলাস্তরের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার শিলার উপাদান অথবা যুগ যুগ ধরে রাসায়নিক প্রক্রিয়াই শিলাসমূহ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে সব যৌগিক পদার্থ সৃষ্টি করে তাকে খনিজ এর পদার্থ বলে। যেমন- সোনা, রূপা, তামা, গ্যাস ইত্যাদি।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর |
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে খনিজ সম্পদের গুরুত্ব
খনিজ সম্পদ মানবসভ্যতার নিয়ামক। একটি দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নতিতে এর অবদান অত্যধিক। নিম্নে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে খনিজ সম্পদের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-
১. জ্বালানি ও শক্তির উৎস: খনিজ সম্পদ্ শিল্পের জ্বালানি ও শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। যেমন- কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি শিল্পের জ্বালানি ও শক্তির উৎস হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
২. শিল্পের কাঁচামাল: খনিজ সম্পদ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- চুনাপাথর সিমেন্ট শিল্পে, প্রাকৃতিক গ্যাস সার শিল্পে, লোহা ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৩. শিল্পোন্নয়ন: কোনো দেশের শিল্পোন্নয়নে খনিজ সম্পদের অবদান অপরিসীম। খনিজ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।
৪. পরিবহণ ও যোগাযোগ: উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা | আর্থিক আর্থিক ও বাণিজ্যিক উন্নতির পূর্বশর্ত।। দেশের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে খনিজ সম্পদের বিশেষ অবদান রয়েছে। সড়ক ও সেতু নির্মাণে, বিভিন্ন খুঁটি ও টাওয়ার নির্মাণে, যানবাহন তৈরিতে কঠিন শিলা ও লোহা এবং যানবাহন চালনায় খনিজ তেল ব্যবহৃত হয়।
৫. ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি: ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতির চালিকাশক্তি। খনিজসম্পদ ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। খনিজ সম্পদ্ রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।
৬. যন্ত্রপাতি: খনিজ সম্পদ যন্ত্রপাতি তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখে। লোহা, তামা, দস্তা প্রভৃতি খনিজসম্পদ দ্বারা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়।
৭. অবকাঠামো নির্মাণ: দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণে খনিজ সম্পদের অবদান সর্বাধিক। রাস্তাঘাট ও দালানকোঠা নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদিতে কয়লা, লৌহা ও কঠিন শিলার বিশেষ অবদান রয়েছে।
৮. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন: দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। মধ্যপ্রাচ্যের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে খনিজ তেলের প্রভাব অপরিসীম। কারণ খনিজ তেল আবিষ্কারের পূর্বে উক্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান ছিল নিম্নমানের।
৯. কর্মসংস্থান: খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, উত্তোলন, সরবরাহ ইত্যাদি কাজে অধিক জনশক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে দেশে প্রচুর দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক, বিশেষজ্ঞ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।
মৌসুমী জলবায়ু কাকে বলে? মৌসুমী জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ |
১০. অলংকরাদি: সোনা, রূপা, হীরক, প্লাটিনাম ইত্যাদি খনিজসম্পদ দ্বারা মূল্যবান অলংকারাদি প্রস্তুত করা হয়, যা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে সহয়তা করে।
১১. সভ্যতার বিকাশ: সভ্যতার বিকাশে খনিজ সম্পদের বিশেষ অবদান রয়েছে। খনিজ সম্পদের দ্বারা প্রস্তুত অস্ত্রশস্ত্র, কলকব্জা, রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, উড়োজাহাজ ইত্যাদির মাধ্যমে মানবসভ্যতার দ্রুত বিকাশ ঘটেছে।
উপসংহার
পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের উন্নতির মূলে রয়েছে খনিজ সম্পদ। তাই কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে খনিজ সম্পদের গুরুত্ব ও অবদান অপরিসীম।