Home » নববৈপল্য সূত্র কি? এর সংক্ষিপ্ত বিবরন দাও।

নববৈপল্য সূত্র কি? এর সংক্ষিপ্ত বিবরন দাও।

by Susmi
0 comment

বুদ্ধের পরিনির্বানের শত বৎসর পর বৌদ্ধধর্ম স্থবিরবাদ মহাসাংঘিক এই দুই প্রধান সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে মহাসাংঘিক নিকায় বাদীরা পরবর্তীতে খৃঃ পূঃ দ্বিতীয় শতাব্দী হতে খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর মধ্যে এমন কতগুলো সূত্র রচনা করে যা হতে কালান্তরে মহাযান মতের উৎপত্তি হয এবং খ্রিষ্টীয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যে সমগ্র উত্তর ভারত মহাযান ময় হয়ে উঠে। মহাসাংঘিকেরা কৌশাম্বীতে যে বিভেদের বীজ বপন করেছিণ তা পরবর্তী মহাযান রূপে পরিণত হয়। যার ফল স্বরূপ এক বিশাল সাহিত্যের সৃষ্টি হয়। তারই সংক্ষিপ্ত নিদর্শন নব মহাযান সূত্র বা নববৈপল্য সূত্র । 

নববৈপল্য সূত্র

মহাযান সম্প্রদায়ের নিজস্ব কোন ত্রিপিটক ছিল না এবং সম্ভবও নয়। কারণ মহাযান কোন সুসংবদ্ধ বিশেষ সম্প্রদায়ের নাম নয়। মূলতঃ হীনযান ধর্মতত্ত্বের সমালোচনা ও নতুন দার্শনিক চিন্তাধারাকে বিষয়বস্তুরূপে ভিত্তি করেই মহাযান সূত্রাবলী রচিত হয়েছে এবং পরবর্তীকালের দার্শনিক গ্রন্থাবলী ও সম্প্রদায়গত পৃথক পৃথক সিদ্ধান্তানুযায়ী রচিত হয়েছে। মহাযানের আদি পর্যায়ের রচিত নয়টি মহাযান বৈপুল্যসূত্রকে মূলত বলা হয় নববৈপল্য সূত্র ।

নববৈপল্য সূত্রের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

মহাযানীদের সংস্কৃত ভাষায় রচিত নববৈপল্য সূত্রের ৯টি গ্রন্থ আছে। যথা- ১.স্বদ্ধর্মপুণ্ডরীক সূত্র, ২.অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা, ৩.ললিতবিস্তর, ৪.লংকাবতার সূত্র বা সদ্ধর্মলংকাবতার, ৫.সুবর্ণপ্রভাস, ৬.গণ্ডব্যূহ, ৭.তথাগতগুহ্যক বা কারণ্ডব্যুহ, ৮.সমাধিরাজ, ৯.দশভূমীশ্বর।

১.সদ্ধর্মপুণ্ডরীক সূত্র

সদ্ধর্মপুণ্ডরীক সূত্র মহাযান সূত্রাবলীর মধ্যে একটি মহামূল্যবান গ্রন্থ। পুণ্ডরীক বা শ্বেতপদ্ম বিশুদ্ধতা ও পূর্ণতার প্রতীক।  এটি ২৭টি অধ্যায়ে বিভক্ত। মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম সাহিত্যের সমস্ত বৈশিষ্ট্য এই সূত্রে পরিস্ফুট হয়েছে। সূত্রে শাক্যমনিকে দেবতাদের রাজা এবং মৃত্যুঞ্জয়ী বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সদ্ধর্মপুণ্ডরীক গ্রন্থটি নেপাল, চীন, জাপান, মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পূজিত হয়। এটি পদ্য গদ্যে রচিত। পদ্যাংশটি অর্ধসংস্কৃত এবং গদ্যাংশটি পুরো সংস্কৃত ভাষায় রচিত। প্রথম অধ্যায়ে এই সূত্রটিকে মহাযান বৈপল্য সূত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পরবর্তীতে বুদ্ধ কি করে সর্বপ্রথম এটি দেশনা করেন এবং বোধিসত্ত্ব কর্তৃক তা কিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে তা আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে বুদ্ধযানই একমাত্র যান যার দ্বারা বোধিজ্ঞান লাভ করা যায়। বুদ্ধের করুণাতেই বুদ্ধত্ব অর্জন করা সম্ভব। পঞ্চম অধ্যায়ে ভগবানের করুনার আধার বর্ণিত হয়েছে। চতুর্দশ অধ্যায়ে অতিরঞ্জিতভাবে বুদ্ধের মাহাত্ম্য এবং অসংখ্য বোধিসত্ত্বের আবির্ভাব বর্ণিত হয়েছে। দ্বাবিংশতি অধ্যায়ে এই সূত্র শ্রবণের ফল এবং চতুর্বিংশতি অধ্যায়ে বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। এই অধ্যায়ে বোধিসত্ত্বকে মানবের ত্রানকর্তা বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

লক্ষণসূত্র কোন নিকায়ের অন্তর্গত? এ সূত্র অবলম্বনে বুদ্ধের ৩২ প্রকার লক্ষণ

২.প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র

মহাযান বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা মূল্যবান রচনা হল প্রজ্ঞাপারমিতা মহাযান সূত্রগুলি। তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল- দান, শীল, ক্ষান্তি, বীর্য, সমাধি ও প্রজ্ঞা প্রভৃতি বোধিসত্ত্বচর্যার ছয় পারমিতা। প্রজ্ঞা অর্থ শূন্যতা জ্ঞান অর্থাৎ সমস্ত জাগতিক বস্তু এবং ধর্মের (চিন্তনীয় বিয়ষ)আপেক্ষিক অস্তিত্ব ও নৈরাত্ম্য সম্পর্কে জ্ঞান। প্রজ্ঞাপারমিতার মূল সংস্কৃত গ্রন্থটি পাওয়া যায়নি তবে এর নেপালী ও চীনা অনুবাদ পাওয়া গিয়েছে। প্রজ্ঞাপারমিতা গ্রন্থের মধ্যে অষ্ট সাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতাই প্রাচীনতম এবং মূল গ্রন্থ। এটি ৩২টি অধ্যায়ে বিভক্ত। শূন্যতা সম্পর্কে জ্ঞানতত্ত্বগত ও অধিবিদ্যাগত বহু দীর্ঘ আলোচনা ছাড়াও এতে বোধিসত্ত্ব সম্পর্কে যে আলোচনা আছে তাতে এটিকে ধর্মীয় গ্রন্থ বলা যায় এবং এই ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য কয়েকটি অধ্যায় জুড়ে প্রকাশ পেয়েছে। এতে প্রজ্ঞাপারমিতার পঠন, পাঠন, শিক্ষার এবং শিক্ষাদানের ফলস্বরূপ অশেষ পূণ্য সঞ্চয়ের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। মহাযানপুত্র সুলভ অতিরঞ্জন প্রজ্ঞাপারমিতাতেও যথেষ্ট দৃষ্ট হয়।

৩.ললিতবিস্তর সূত্র

ললিত বিস্তর সূত্রটি বুদ্ধের জীবনী নির্ভর একটি সূত্র। এটি ২৭টি অধ্যায়ে বিভক্ত। ললিত বিস্তরে ভগবান বুদ্ধের মায়াদেবী গর্ভে জন্ম লাভ হতে বুদ্ধত্ব লাভ, ধর্মচক্রসূত্র দেশনা পর্যন্ত ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থে অভিনিষ্ক্রমণ সূত্রকে মহাব্যুহ সূত্র বলা হয়। গ্রন্থের শুরুতে বর্ণিত আছে যে, ভগবান যখন রাত্রির মধ্যম যামে সমাহিত তখন ভ্রূমধ্যস্থ উষ্ণীষ হতে অপ্রমাণ রশ্মি নির্গত হয়ে সমস্ত দেবলোক আলোকিত করে দেবতাদের উদ্বুদ্ধ করে। এবং সাথে সাথেই সমস্ত দেবগন ভগবানের বন্দনাত্মে উপস্থিত হন। দ্বিতীয় অধ্যায় হতে ষষ্ঠ অধ্যায় পর্যন্ত তুষিত স্বর্গ হতে চ্যুত হয়ে বোধিসত্ত্বের জন্ম পর্যন্ত আলোচিত হয়েছে। সপ্তম অধ্যায়ে বুদ্ধ আনন্দের কথোপকথনের জন্য বুদ্ধ কাহিনী ধারা ব্যাহত হয়েছে। অষ্টম অধ্যায়ে দেবমূর্তিগুলোর বোধিসত্ত্বের পায়ে লুটিয়ে পড়ার কথা এবং দশম অধ্যায়ে বোধিসত্ত্বের প্রথম বিদ্যালয় গমনের বর্ণনা রয়েছে। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ অধ্যায়ে অনেক ঘটনার উল্লেখ আছে যা বুদ্ধের অন্য জীবন চরিতে পাওয়া যায় না। চতুর্দশ হতে ষড়বিংশতি অধ্যায় পর্যন্ত বোধিসত্ত্বের চারি নিমিত্ত দর্শন, গৃহত্যাগ, মারবিজয়, বুদ্ধত্বলাভ ইত্যাদি ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। শেষ সপ্তবিংশতি অধ্যায়ে সম্পূর্ণ মহাযান রীতিতে ললিতবিস্তরের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।

৪.লংকাবতার সূত্র

লংকাবতার সূত্রটি যোগাচার দর্শনের প্রামাণ্য গ্রন্থ বলে বিবেচিত। লংকাবতারের যৌগিক অর্থ লংকা দ্বীপে অবতরণ।বুদ্ধ লংকাদ্বীপে অবতরণ করে লংকাধিপতি রাবণকে সদ্ধর্মের উপদেশ দিয়েছিলেন। সেইজন্য এ সূত্রের নামকরণ করা হয়েছে লংকাবতার সূত্র। এ গ্রন্থটির বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময়ে রচিত হয়েছে। বর্তমানে মূল গ্রন্থটি দশটি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম অধ্যায়ে বুদ্ধের সঙ্গে লংকার রাক্ষসরাজ রাবণের সাক্ষাৎকার বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় হতে সপ্তম অধ্যায় পর্যন্ত অংশে বিজ্ঞানবাদের মৌলিক সিদ্ধান্তসমূহের প্রতিপাদন করা হয়েছে। তার মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায় অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় অধ্যায়ে নির্বাণ, সংসারবন্ধন মুক্তি, আলয়বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, শূন্যতা, বুদ্ধত্ব প্রভৃতি দার্শনিক বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে লোকোত্তরবাদ, অনিরোধ-অনুৎপাদ, শূন্যতা, তথতা, ধর্মধাতু, নির্বাণ প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে দশভূমি আলোচিত হয়েছে। অষ্টম অধ্যায়ে মাংস ভক্ষণের উপযোগিতা, অনুপযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা আছে। নবম অধ্যায়ে সর্পদানব, রাক্ষসী, ডাকিনী ইত্যাদি সকল প্রকার উপদ্রব হতে বিপদমুক্ত হবার জন্য ধারণী রক্ষামন্ত্রবিশেষ আলোচিত হয়েছে।

৫.সুবর্ণপ্রভাস সূত্র

সুবর্ণপ্রভাস সূত্রকে বলা হয় মহাযান গ্রন্থের মধ্যে সর্বশেষ সূত্র। এটির মূল সংস্কৃত সংস্করণ পাওয়া গিয়েছে এবং মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এই সূত্রের বিষয়বস্তু মহাযানের দার্শনিক তত্ত্বের ও চরিত্রনীতির বিশদ আলোচনা এবং এতে অনেক কাহিনী আছে যাদের অধিকাংশের উপর তন্ত্রের প্রভাব সুস্পষ্ট। মূল সুবর্ণপ্রভাস ২৯টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রথম ছয় অধ্যায়ে মহাযান দর্শনের তাত্ত্বিক আলোচনা আছে। এতে তথাগতের আয়ুর পরিষ্মাণ, পাপদেশনা তথা পুণ্যানুমোদনের বিস্তৃত বর্ণনা আছে। অষ্টম অধ্যায়ে দেবী সরস্বতী এবং নবম অধ্যায়ে দেখা যায় শ্রী মহাদেবী আবির্ভূত হয়ে সুবর্ণপ্রভাসকে ধারণীরূপে প্রতিভাত করেছেন। ত্রয়োদশ অধ্যায় দেবেন্দ্রসময় একটি রাজশাস্ত্র বিশেষ যা রাজা বলদকেতু পুত্র রচিরকেতুর রাজ্যাভিষেকের সময় পাঠ করেছেন।

৬.গণ্ডব্যুহ সূত্র

গণ্ডব্যুহ সূত্রে বোধিসত্ত্ব উপাসনা বা ভক্তির সুন্দর বর্ণনা পাওয়া যায়। এতে মঞ্জুশ্রী সমন্তভদ্র, মৈত্রেয় প্রভৃতি বোধিসত্ত্বগণের মহিমা কীর্তিত হয়েছে এবং বিশেষভাবে মঞ্জুশ্রী বোধিসত্ত্বের প্রভাবেই সর্বাধিক এতে প্রকাশিত হয়েছে। গণ্ডব্যুহের প্রধান বিষয়বস্তু হল মঞ্জুশ্রী বোধিসত্ত্বের নির্দেশে সুধন নামক শ্রেষ্ঠীপুত্রের জ্ঞানার্জনের জন্য নানা জায়গায় ভ্রমণ। গণ্ডব্যুহের শেষাংশে ভদ্রচারী প্রণিধান গাথা নামক দোধক ছন্দে ৬২টি মনোরম স্তুতিগাথা দেওয়া হয়েছে যা কাব্যশৈলীতে অতি উৎকৃষ্ট পর্যায়ের রচনা।

৭.কারণ্ডব্যুহ

মহাযান সূত্র গুলোর মধ্যে কারণ্ডব্যূহ অত্যন্ত পরিত্র একটি গ্রন্থ। এতে বোধিসত্ত্বের গুণ মহিমা বর্ণিত হয়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভক্তি প্রধান মহাযান সূত্র। এর গদ্য পদ্যে লিখিত দুইটি সংস্করণ আছে। গদ্যাংশে আদি বুদ্ধের কল্পনা অংকুরিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আদিবুদ্ধ জগতের কর্তা। তিনিই অবলোকিতেশ্বরকে সৃষ্টি করেন যার দেহ হতে সমস্ত দেবতাদের উৎপত্তি হয়েছিল। কারণ্ডব্যূহের উভয় সংস্করণেই সর্ব জীবের প্রতি অবলোকিতেশ্বরের মহা করুণা ও মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে। কারণ্ডব্যুহের প্রথম দিকের অধ্যায়গুলোতে কিভাবে তিনি নরক ও প্রেতলোকে গিয়ে পাপীদের উদ্ধার করলেন, এরপর লংকায় গিয়ে মাংসাশী রাক্ষসদের ধর্মান্তরিত করার কাহিনী, বারণসীতে কীটপতঙ্গরূপে জাত মানুষদের নিকট ধর্ম প্রচারের কাহিনী, মগধে গিয়ে দুর্ভিক্ষ হতে অধিবাসীদের রক্ষা করার কাহিনী, সিংহলে ডাকিনী কবলিত ভগ্ন জাহাজের যাত্রীদের উদ্ধারের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে মঙ্গলদায়ক ছয় অক্ষরের রক্ষামন্ত্র “ও মণিপদ্মে হু” এর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।

৮.সমাধিরাজ সূত্র

মহাযান সূত্রাবলীর মধ্যে অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের রচনা সমাধিরাজ সূত্র একটি মূল্যবান গ্রন্থ। এর অপর নাম চন্দ্রপ্রদীপসূত্র। এই গ্রন্থের প্রধান বিষয়বস্তু সমাধি তথা সর্বধর্মসমতাজ্ঞান দ্বারা শূন্যতার প্রতিপাদন করা। ৪০ টি অধ্যায়ে বিভক্ত গ্রন্থটিতে বুদ্ধ ও চন্দ্রপ্রদীপের কথোপকথনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে কিভাবে বোধিসত্ত্ব বিভিন্ন ধ্যান বা সমাধি, বিশেষতঃ সর্বোত্তম সমাধিরাজের দ্বারা চরম বুদ্ধত্বজ্ঞান লাভ করতে পারেন এবং এই সর্বোত্তম সমাধি ভাবনার জন্য প্রাথমিক প্রয়োজনীয় শর্তগুলি বর্ণিত হয়েছে। এই প্রাথমিক শর্তগুলি হচ্ছে- বুদ্ধের উপাসনা, সন্ন্যাসব্রত অবলম্বন, ভদ্রতা, সর্বপ্রাণীদের প্রতি সদয়ভাব, আত্মত্যাগে নিজের দেহ ও স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীন ভাব এবং সর্বশেষে সর্বধর্মে শূন্যতাজ্ঞানে দৃঢ় বিশ্বাস। এছাড়াও এতে সমাধিরাজের দ্বারা উপকৃত ঋষিদের কাহিনীও বিধৃত আছে।

আরও পড়ুন

পঞ্চশীল গুলো কি কি? পঞ্চশীল পালনের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি আনয়ন সম্ভব 

৯.দশভূমিক সূত্র

মহাযান সূত্র গ্রন্থাবলীর মধ্যে দশভূমিক সূত্র অন্যতম। এটি ধর্মরক্ষ কর্তৃক ২৯৭ খৃষ্টাব্দে চীনা ভাষায় প্রথম অনুদিত হয়। দশভূমিক সূত্রের বিষয়বস্তু হল- বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির জন্য প্রমুদিতা, বিমলা বা অধিশীল, প্রভাকরী বা অধিচিত্তবিহার, অর্চিষ্মতী বা বোধিপক্ষ্য প্রতিসংযুক্তাধিপ্রজ্ঞাবিহার, সুদুর্জয়া বা সত্যপ্রতিসংযুক্তধিপ্রজ্ঞাবিহার, অভিমুখী বা প্রতীত্যসমুৎপাদ প্রতিসংযুক্তাধিপ্রজ্ঞাবিহার, দূরংগমা বা সাভিসংস্কার সাভোগ নির্নিমিত্তবিহার, অচলা বা অনাভোগনির্নিমিত্তবিহার, সাধুমতী বা প্রতিসংবিদবিহার এবং ধর্মমেঘা বা পরম বিহার বোধিসত্ত্বের বুদ্ধত্ব লাভের এই দশবিধভূমি অতিক্রম করতে হয়, তারই বিস্তৃত বর্ণনা।

উপসংহার

মহাযান বৌদ্ধ দর্শনে নববৈপল্য সূত্র একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই সূত্রগুলো মূলত মহাযান দর্শন প্রচারে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। এই সূত্রগুলোর উপর ভিত্তি করেই নাগার্জুন, বসুবন্ধু, ধর্মকীর্তি, অসঙ্গ প্রভৃতি দার্শনিকগণ তাঁদের মত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে নববৈপুল্য সূত্রগুলো পরম শ্রদ্ধা সহকারে পূজিত হয়।

Related Posts