Home » ন্যায় দর্শনে পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা কর।

ন্যায় দর্শনে পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা কর।

by Susmi
0 comment

ন্যায় দর্শন কি? ন্যায় দর্শনে কার্যকারণ তত্ত্ব – এ সম্পর্কে আমরা আগের লেখায় জেনেছি। আজ জানবো ন্যায় দর্শনে পদার্থ কত প্রকার ও কি কি?

ন্যায় দর্শনে পদার্থ

ন্যায়সূত্রকার মহর্ষি গৌতম তার ন্যায় সূত্রের প্রথম সূত্রে বলেছেন-

“প্রমাণ-প্রমেয়-সংশয় প্রয়োজন
দৃষ্টান্ত সিদ্ধান্তবয়ব-তর্ক-নির্ণয়-বাদ-জল্প
বিতন্ডা-হেত্বাভাসচ্ছল-জাতি-নিগ্রহস্থানানাং
তত্ত্বজ্ঞানান্নিঃ শ্রেয়সাধিগমঃ।।” (ন্যায়সূত্র- ১/১/১)

অর্থাৎ, মোক্ষোপযোগী এই ভাব পদার্থেরই প্রকার- প্রমাণ, প্রমেয়, সংশয়, প্রয়োজন, দৃষ্টান্ত, সিদ্ধান্ত অবয়ব, তর্ক , নির্ণয়, বাদ, জল্প, বিতন্ডা, হেত্বভাস, ছল, জাতি ও নিগ্রহস্থানের অর্থাৎ এই ষোল প্রকার পদার্থের তত্ত্বজ্ঞানপ্রযুক্ত নিঃশ্রেয়স লাভ হয়। সাধারণত আমরা পদার্থ বলতে যা বুঝি এখানে পদার্থ অর্থ তা নয়। ন্যায় মতে পদার্থের অর্থ হচ্ছে- ”পদস্য” অর্থ: পদার্থ”। পদের অর্থই হল পদার্থ। অর্থাৎ কোন পদ দ্বারা যে অর্থ বা বিষয় নির্দেশিত হয়, তাই পদার্থ। প্রতিটি পদার্থই জ্ঞেয়, প্রমেয় এবং অভিধেয়। অর্থাৎ যাকে জানা যায়, যার সত্তা আছে এবং যার নামকরণ করা যায়, তাই পদার্থ। ন্যায়দর্শন অনুযায়ী পদার্থগুলির তত্ত্বজ্ঞান জীবের মোক্ষ লাভের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

ন্যায় দর্শনে পদার্থের প্রকারভেদ

ন্যায় দর্শনের উদ্দেশ্য হল ষোলটি পদার্থের তত্বজ্ঞান প্রদান করা। এই ষোলটি পদার্থ হল:

১. প্রমাণ, ২.প্রমেয়, ৩.সংশয়, ৪.প্রয়োজন, ৫.দৃষ্টান্ত, ৬.সিদ্ধান্ত, ৭.অবয়ব, ৮.তর্ক, ৯.নির্ণয়, ১০.বাদ, ১১.জল্প, ১২.বিতন্ডা, ১৩.হেত্বাভাস, ১৪.ছল, ১৫.জাতি, ১৬.নিগ্রহস্থান।

ষোল প্রকার পদার্থের বর্ণনা

১. প্রমাণ: জ্ঞাতাকে প্রমাতা বলে, জ্ঞেয় বিষয়কে বলে প্রমেয়, আর যে প্রণালী অবলম্বন করে জ্ঞান লাভ হয় তাকে বলা হয় প্রমাণ। প্রমাণ ছাড়া কোন পদার্থেরই সিদ্ধি হয় না বলে ন্যায় দর্শনের প্রথমেই প্রমাণ পদার্থ আলোচিত হয়েছে। যার দ্বারা বিষয়ের যথার্থ জ্ঞান হয় তাই “প্রমাণ”। প্রমাণ চার প্রকার- প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ। এই চারটি প্রমাণের যে কোন একটির সাহায্য ছাড়া কোন বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান হতে পারে না। আবার এই চারটি প্রমাণের মধ্যে প্রত্যক্ষই প্রধান, অন্য তিনটি প্রমাণ প্রত্যক্ষনির্ভর।

২. প্রমেয়: “প্রমেয়” শব্দের অর্থ হল “প্রকৃষ্ট মেয়” অর্থাৎ “প্রকৃষ্ট জ্ঞেয়”। প্রমাণের দ্বারা প্রমেয় পদার্থকেই জানতে হবে। প্রমেয়ের জ্ঞান মুক্তিলাভের সহায়ক। ন্যায় দর্শনে পদার্থ বারোটি। এই বারোটি পদার্থ সম্বন্ধে মিথ্যাজ্ঞান জীবের পুনর্জন্মের কারণ। এই পদার্থগুলির তত্ত্বজ্ঞান হলে মিথ্যাজ্ঞান তিরোহিত হয়। বারোটি প্রমেয় হল- ১.আত্মা, ২.শরীর, ৩. ইন্দ্রিয়, ৪.অর্থ বা ইন্দ্রিয়ের বিষয়, ৫.বুদ্ধি, ৬.মন, ৭.প্রকৃতি, ৮.দোষ, ৯.প্রেত্যভাব অর্থাৎ পুনর্জন্ম ও পুনরায় মৃত্যু, ১০. ফল, ১১.দুঃখ, ১২.অপবর্গ বা মোক্ষ

৩. সংশয়: একই বস্তুতে নানা বিরুদ্ধ ধর্মের জ্ঞানের নাম সংশয়। অন্ধকার দূরের ডালপালাশূন্য গাছ দেখে সংশয় জাগে যে, এটি গাছ না মানুষ। যার সংশয় হয় সেই ব্যক্তি গাছ ও মানুষের সমান উচ্চতা প্রভৃতি যেসব ধর্ম আছে সেসব ধর্ম বিশিষ্ট বলে দূরের বস্তুকে দেখছে, কিছুই নিশ্চয় করে বলতে পারছে না। একই বিষয়ে একই সময়ে পরস্পরবিরুদ্ধ কথা শুনলে সংশয় হয়। এক ব্যক্তি বললেন, “জগৎ সত্য”, অপর ব্যক্তি বললেন, “জগৎ মিথ্যা”। এই পরস্পরবিরুদ্ধ বাক্য দুটি যারা শুনবেন তাদের জগতের সভ্যতা ও মিথ্যাত্ব বিষয়ে সংশয় উপস্থিত হবে। সংশয় তাই অযথার্থ জ্ঞান।

৪. প্রয়োজন: আমরা যেকোন কাজ করি না কেন, তার একটা উদ্দেশ্য থাকে। পূর্ব থেকে মনে মনে উদ্দেশ্য ‍স্থির না করে কোন স্বাভাবিক ব্যক্তিই কাজে প্রবৃত্ত হয়না। এই উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যকেই প্রয়োজন বলে।

৫. দৃষ্টান্ত: সাধারণ লোক একটি বস্তুকে যেভাবে দেখে, মর্জিতবুদ্ধি শিক্ষিত ব্যক্তিও যদি সেই বস্তুকে সেইভাবে দেখেন তাহলে সেই পদার্থটিকে বলা হয় “দৃষ্টান্ত”। দৃষ্টান্ত ছাড়া কেবল যুক্তিতর্ক দিয়ে কোন বিষয়বস্তুকে পরিষ্কারভাবে বোঝানো কঠিন। যেখানে ধূম আছে সেখানেই আগুন আছে, যথা- পাকঘর। এখানে পাকঘরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

৬. সিদ্ধান্ত: যে বিষয়কে যুক্তিতর্ক ও প্রমাণের দ্বারা সুনিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তাকে বলা হয় সিদ্ধান্ত। কোন বিচার্য বিষয় সম্পর্কে ভুল ধারণা বা সংশয় থাকলে শাস্ত্রের সাহায্যে যথার্থ ধারণায় পৌঁছানো যায় বলে শাস্ত্রের যথাযথ অর্থের নাম সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত চার প্রকার।
ক. সর্বপ্রকার শাস্ত্র যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তার নাম “সর্বতন্ত্রসিদ্ধান্ত”।
খ. যে সিদ্ধান্ত নিজের শাস্ত্রে স্বীকার করা হয়েছে অথচ অন্য শাস্ত্রে স্বীকার করা হয়নি তাকে বলে “প্রতিতন্ত্রসিদ্ধান্ত”
গ. যে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করলে প্রসঙ্গক্রমে অন্য বিষয়েরও প্রতিষ্ঠা হয় তার নাম “অধিকরণসিদ্ধান্ত”।
ঘ. চতর্থ সিদ্ধান্তের নাম “অভ্যুপগমসিদ্ধান্ত”।

৭. অবয়ব: অবয়ব হল ন্যায় অনুমানের আশ্রয়বাক্য। পরার্থানুমানে প্রতিজ্ঞা, হেতু, উদাহরণ, উপনয়, নিগমন বা সিদ্ধান্ত এই পাঁচটি আশ্রয়বাক্য থাকে। তাই পরার্থনুমান পঞ্চঅবয়বী। কিন্তু স্বার্থানুমান ত্রি-অবয়বী।

৮. তর্ক: প্রমাণের সাহায্যে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেল তার বিপরীত সিদ্ধান্ত যে অসম্ভব তা প্রমাণ করার জন্য যে যুক্তি প্রদর্শন করা হয় তাকে “তর্ক” বলে। ধূম থাকলেই সেখানে আগুন থাকে- এই সিদ্ধান্ত যদি কেই অস্বীকার করে তবে তার বিরুদ্ধে এভাবে যুক্তি দেওয়া যেতে পারে। যে আগুন না থাকলেও ধূম থাকতে পারে। একথা সত্য হয় অথচ অভিজ্ঞতায় তা সত্য প্রমাণিত হয়না। সুতরাং পূর্বেকার সিদ্ধান্তই ঠিক। তর্কের উদ্দেশ্য সংশয় নিরসন। তর্ক যদিও নিজে প্রমাণ নয়, তবু প্রমাণের সত্যতা নির্ণয়ে প্রমাণকে শক্তিশালী করে।

৯. নির্ণয়: বিচারে প্রতিপক্ষের যুক্তিতে দোষ দেখিয়ে নিজের বক্তব্যে স্থাপন করে বিচার্য বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত করার নাম নির্ণয়। তর্কের শেষ ফল হল নির্ণয়। সাধারণত: কোন বিষয়ে সংশয় উপস্থিত হলে নির্ণয়ের আবশ্যক হয়। কিন্তু সংশয় না থাকলে ও নির্ণয় হতে পারে। নির্ণয় হল এমন যুক্তি যার সাহায্যে এক পক্ষের মতকে গ্রহণ করা হয় এবং অপর পক্ষের মতকে বর্জন করা হয়।

১০. বাদ: কোন বস্তুর সত্যতা নির্ণয়ের জন্য দুইজনের মধ্যে সেই বিষয়ে ন্যায়ানুসারে শাস্ত্রীয় বিচারের রীতিতে যে আলোচনা হয় তাকে “বাদ” বলে। এখানে বাদী ও প্রতিবাদী উভয়েরই লক্ষ্য তত্ত্ব নির্ণয়, কাউকে বাদ করা নয়, কিংবা জয়-পরাজয়ের কোন লক্ষ্যও তাতে থাকে না। বাদে নিরর্থক কথা কাটাকাটির স্থান নেই, শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও কোন কথা বাদে উঠতে পারে না। এই বিচার প্রণালীর শ্রেষ্ঠতা সকলেই স্বীকার করে না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে আবার তার অস্তিত্ব নেই- উভয় সিদ্ধান্তই একসঙ্গে গ্রাহ্য নয়। এক্ষেত্রে ঈশ্বরের যথার্থ স্বরূপ নির্ণয় করার জন্য শাস্ত্রসম্মত যে আলোচনা তাকেই বলা হবে “বাদ”।

১১. জল্প: বিষয়ের যথার্থ নির্ণয়ের প্রতি লক্ষ্য না রেখে কেবল প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্য যে বাকযুদ্ধ চলে তাকে বলে “জল্প”। জল্পে বাদী ও প্রতিবাদী স্বীয় মত প্রতিষ্ঠা করার জন্য অশাস্ত্রীয় রীতিতেও বিচার করে থাকে। যেমন করে হোক আত্মপক্ষ সমর্থন ও পরপক্ষ খণ্ডন করাই জল্পের উদ্দেশ্য।

১২. বিতণ্ডা: বিতণ্ডা হল বাজে তর্ক। বিতণ্ডাতে বাদী ও প্রতিবাদীর কোন লক্ষ্য নেই। শুধু প্রতিপক্ষের অভিমত খণ্ডনের চেষ্টা আছে বিতণ্ডাতে। বিতণ্ডা সর্বাপেক্ষা নিন্দিত হলেও এর প্রয়োজন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আছে। বিতণ্ডা হল এক প্রকার যুক্তিহীন তর্ক। এক্ষেত্রে কোন পক্ষই নিজের মত প্রতিষ্ঠা না করে অপরের মতকে খণ্ডন করার চেষ্টা করে। অর্থাৎ বিতণ্ডা হলো এক প্রকার আলোচনা যার লক্ষ্য তত্ত্বজ্ঞান নয়, জয় লাভ করা ও নয়, যার একমাত্র লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে খণ্ডন করা।

১৩. হেত্বভাস: অনুমান প্রয়োগের সময় যে হেতুপদ দোষযুক্ত, যে হেতুপদ প্রকৃত হেতুপদের কাজ করে না, তাকে ”হেত্বভাস” বলে। যা আসলে হেতু নয়, অথচ হেতুর মতো প্রতীয়মান হয় তাকেই বলে হেত্বাভাস বা হেতুর আভাস।

১৪. ছল: বক্তা যে অর্থে বাক্য প্রয়োগ করেন, প্রতিপক্ষ যখন তার বিপরীত অর্থ কল্পনা করে বক্তার বাক্যে দোষ প্রদর্শন করেন তখন তা হয় ছল। ছল তিন প্রকার- বাকছল, সামান্যচ্ছল এবং উপচারচ্ছল। বাদীপক্ষের কথার বিকৃত অর্থ করে তাকে উপহাসের বিষয় করা বাক্ছলের উদ্দেশ্য। একক্ষেত্রে যে অর্থ সম্ভব, অন্য ক্ষেত্রে তা অসম্ভব হলেও শুধু সাদৃশ্যের জোরে সম্ভবপরতা কল্পনা করার নাম “সামান্যচ্ছল”। শব্দের মুখ্য ও গৌণ দুই প্রকার অর্থ আছে। বক্তা মুখ্য অর্থে বা গৌণ অর্থে বাক্য প্রয়োগ করলে তার বিপরীত অর্থ গ্রহণ করে দোষ দেখানোর নাম “উপরাচ্ছল”।

১৫. জাতি: ব্যাপ্তির উপর ভিত্তি না করে শুধু সাধর্ম্য বা বৈধর্ম্যের দ্বারা বাক্যে দোষ উদ্ভাবন করাকে “জাতি” বলে। ঘটের মতো উৎপত্তিশীল বলে আকাশ অনিত্য বাদীর এ যুক্তি ভূল প্রমাণ করার জন্য যদি প্রতিবাদী যুক্তি দেয় যে, ”আকাশ নিত্য, কেননা ঘটের যেমন আকৃতি আছে, আকাশের তেমন আকৃতি নেই” তাহলে একে বৈধর্ম্যসম জাতি বলা হবে। প্রতিবাদীর যুক্তি এক্ষেত্রে কেবল ঘটের সাথে আকাশের বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। সাধর্ম্যসম, বৈধর্ম্যসম, উৎকর্ষসম প্রভৃতি চব্বিশ প্রকার জাতি আছে।

১৬. নিগ্রহস্থান: শেষ পদার্থ হল নিগ্রহস্থান। বিচারে পরাজয়ের নাম নিগ্রহ। নিগ্রহের স্থান অর্থাৎ কারণকেই “নিগ্রহস্থান” বলে। যেসব বাক্যে বাদী বা প্রতিবাদীর বিচার্য বিষয়ের বিপরীত জ্ঞান অথবা বিচার্য বিষয়ে অজ্ঞানতা প্রকাশ পায় তার নাম নিগ্রহস্থান। প্রতিপক্ষের মতকে যুক্তির দ্বারা খণ্ডন করতে না পারলে কিংবা প্রতিপক্ষ কর্তৃক নিজ মত খণ্ডিত হবার ফলে তাকে যুক্তি দিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে তা হবে নিগ্রহস্থান। প্রতিজ্ঞাহানি, প্রতিজ্ঞান্তর, প্রতিজ্ঞাবিরোধ প্রভৃতি বাইশ প্রকার নিগ্রহস্থান আছে।

উপসংহার

পরিশেষে একথা বলা যায় যে, নৈয়ায়িকেরা যে ষোলটি পদার্থের উল্লেখ করেছেন তার অনেক কয়টিই বিশুদ্ধ তর্কশাস্ত্রের কিংবা মনোবিদ্যার আলোচ্য বিষয়। ডঃ রাধাকৃষণের মতে, ন্যায়ে ষোলটি পদার্থ অস্তিত্বশীল বস্তুর বিশ্লেষণ নয়, তারা তর্কশাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়।

আশা করি, ন্যায় দর্শনে পদার্থ কত প্রকার সেসম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছেন। এরকম আরও প্রয়োজনীয় লেখা পেতে ব্লগটির সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

Related Posts