পিটুইটারি গ্রন্থির কাজ
পিটুইটারি গ্রন্থি ছোট মটরদানার ন্যায় ৫ গ্রাম ওজনের লাল-ধূসর রঙের একটি গ্রন্থি। একটি ছোট বৃন্তের মতো অংশের সাহায্য মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের সাথে যুক্ত থাকে। এই গ্রন্থিকে গ্রন্থির রাজা বা মাস্টার গ্লান্ড বলা হয়। কারণ অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পিটুইটারি গ্রন্থি যেমন জীবের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলোর ক্ষরণও নিয়ন্ত্রণ করে। পিটুইটারি গ্রন্থি কর্তৃক নিঃসৃত হরমোনের সংখ্যা অনেক। মনোবিদরা এ গ্রন্থি সম্পর্কে বলেন, “Pituitary is actually of servant of the brain, because the brain is ultimately responsible for the endocrine systems functioning.”
গ্রন্থি কি | গ্রন্থি কত প্রকার ও কি কি? |
পিটুইটারি গ্রন্থিকে দুটি মূলভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক. অগ্র পিটুইটারি (Anterior Pituitary) এবং
খ. পশ্চাৎ পিটুইটারি (Posterior Pituitary)।
নিম্নে পিটুইটারি গ্রন্থির কাজ গুলো এই দুইভাগে আলোচনা করা হলো-
ক. অগ্র পিটুইটারি (Anterior petuitary)
সম্মুখ লোব এবং ইন্টারমিডিয়েড লোব নিয়ে অগ্র পিটুইটারী গ্রন্থি গঠিত। এখান থেকে ৬টি হরমোন তৈরি হয়। এগুলো হলো সোমাটোট্রপিক, অ্যাড্রিনো কর্টিকোট্রপিক, থাইরয়েড স্টিমুলেটিং, ফশিকল স্টিমুলেটিং, লুটিনাইজিং এবং ল্যাকটোজেনিক হরমোন।
অগ্র পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যক্রম/প্রভাব:
অগ্র পিটুইটারি থেকে ক্ষরিত হরমোনগুলোর কার্যক্রম বা প্রভাব নিম্নরূপ:
1. সোমাটোট্রপিক হরমোন (Somatotropic hormone): এই হরমোনের মাধ্যমে দেহের পেশীকলা, অস্থি, তরুণাস্থিসহ সমগ্র দেহের বৃদ্ধি ঘটে। প্রোটিন সংশ্লেষ ও সাধারণ দেহ বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। অত্যধিক ক্ষরণ হলে মানুষ বিশালাকৃতির হয়। আবার ক্ষরণ কম হলে মানুষ বেঁটে হয়ে থাকে।
ii. অ্যাড্রিনো কর্টিকোট্রপিক হরমোন (Adreno-corticotropic hormone): অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপিত করে। শর্করা, আমিষ ও স্নেহ পদার্থের বিপাকে পরোক্ষ ভূমিকা পালন করে। ক্ষরণ কম হলে শর্করা ও খনিজ পদার্থের পরিমাণের সাম্যতা নষ্ট হয়ে শারীরবৃত্তীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। ক্ষরণ বেশি হলে দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমে স্কুলকার হয়। একে কুশিং রোগ বলে।
iii. থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (Thyroid stimulating hormone): থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। আয়োডিন গ্রহণ ও থাইরক্সিন ক্ষরণের হার নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষরণ কম হলে থাইরয়েড গ্রন্থির বিকাশ ব্যাহত হয়। এতে শিশুদের ক্রেটিনিজম এবং বড়দের মেক্সিডিমা রোগ হয়। ক্ষরণ বেশি হলে থাইরয়েড আকৃতিতে বড় হয় এবং গলগণ্ড রোগ দেখা দেয়।
iv. ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (Folicle stimulating hormone): পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন ও শুক্রাণুর পূর্ণতাপ্রাপ্তিতে উদ্দীপনা যোগায়। মহিলাদের ডিম্বাশয়ের গ্রাফিয়ান ফলিকল কোষ উৎপাদনের সূচনা করে। ক্ষরণ কম হলে স্পার্মাটোজেনেসিস ও উত্তজেনেসিস প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
v. লুটিনাইজিং হরমোন (Leutinizing hormone): এটি শুক্রাশয়ে ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ থেকে টেস্টোস্টেরন নিঃসরণে উদ্দীপিত করে। স্ত্রীলোকের Ovulation নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফলিফলকে কার্পাস লুটিয়ানে রূপান্তর নিয়ন্ত্রণ করে। এর ক্ষরণ কম হলে শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ে হরমোন ক্ষরণ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
vi. প্রোল্যাকটিন বা ল্যাকটোজেনিক হরমোন (LTH): এটি কার্পাসলুটিয়ান থেকে টিস্টোস্টেরন ক্ষরণ বজায় রাখে। স্তনগ্রন্থির বিকাশ ও প্রসবের পর দুগ্ধ ক্ষরণে প্রভাবিত করে। এর ক্ষরণ কম হলে স্তনগ্রন্থির বিকাশ ও দুগ্ধ ক্ষরণ ব্যাহত হয়।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থির পার্থক্য আলোচনা |
খ. পশ্চাৎ পিটুইটারি (Posterior petuitary)
পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে পুটি হরমোন নিঃসৃত হয়। এগুলো হলো এন্টিডিউরেটিক হরমোন এবং অক্সিটোসিন। নিম্নে দুটি হরমোনের কার্যক্রম ও প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
i. এন্টিডিউরেটিক হরমোন (Anti-diuretic hormone): এটি বৃক্কের মাধ্যমে মূত্রে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ধমনীর প্রাচীরের পেশীকে সংকোচিত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এর নিঃসরণ কম হলে অত্যধিক মূত্র নিঃসৃত হয়। এই রোগকে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাম বলে। অতিরিক্ত ক্ষরণে যকৃতে গ্লাইক্লোজেন ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
ii. অক্সিটোসিন (Oxytocin): অক্সিটোসিন হরমোন জরায়ু পেশী সংকোচেনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব নিয়ন্ত্রণ করে। স্তনগ্রন্থির দুগ্ধ ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। এর ক্ষরণ কম হলে সন্তান প্রসবে জটিলতা দেখা দেয় এবং দুগ্ধ ক্ষরণ হ্রাস পায়।