Home » বাণিজ্যিক ভূগোল কাকে বলে? বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব কি কি?
বাণিজ্যিক ভূগোল কাকে বলে, বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব, বাণিজ্যিক ভূগোলের সংজ্ঞা দাও,

বাণিজ্যিক ভূগোল কাকে বলে? বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব কি কি?

by Susmi
0 comment

বাণিজ্যিক ভূগোল কাকে বলে?

মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি এবং তার সাথে পরিবেশের সম্পর্ক নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাকে বাণিজ্যিক ভূগোল বলে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমোন্নতির সাথে বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

বাণিজ্যিক ভূগোলের সংজ্ঞা

সাধারণ অর্থে, ভূগোলের যে শাখা বাণিজ্যিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে তাকে বাণিজ্যিক ভূগোল বলে। ব্যাপক অর্থে, ভূগোলের যে শাখা মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং পৃথিবীর উৎপাদন, বণ্টন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু নিয়ে আলোচনা করে তাকে বাণিজ্যিক ভূগোল বলে। নিম্নে কয়েকজন প্রখ্যাত ভূগোলবিদদের সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো-

“পৃথিবীতে মানুষের উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক কার্যাবলির প্রকৃত তারতম্যের বিচারকেই বাণিজ্যিক ভূগোল বলে।” – J.W. Alexander

“বাণিজ্য সম্পর্কীয় ভৌগোলিক তথ্যাবলির বুদ্ধিবৃত্তিক অধ্যয়নকে বাণিজ্যিক ভূগোল বলে।” – অধ্যাপক চিসহোম

বাণিজ্যিক ভূগোলের বিষয়বস্তু আলোচনা কর

“ভূগোলের যে শাখা মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে তাই বাণিজ্যিক ভূগোল।” – Prof B.S. Negi

“বাণিজ্য সংক্রান্ত ভৌগোলিক তথ্যাবলির প্রায়োগিক অধ্যয়নকে বাণিজ্যিক ভূগোল বলে।” – Prof Chisholm

বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা

বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ব্যবস্থা বাণিজ্যিক ভূগোলের বাস্তব জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। নিচে বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

প্রাকৃতিক পরিবেশ

১. পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন: পরিবেশ শুধু মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপকেই নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, আচার-ব্যবহার, শিক্ষা-সভ্যতা, কর্মদক্ষতা প্রভৃতির উপরও প্রভাব বিস্তার করে। বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করা যায়।

২. সম্পদ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ: পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের অবস্থান, উৎপাদন, বণ্টন ও ব্যবহার পর্যালোচনাও বাণিজ্যিক ভূগোলের আলোচনার বিষয়বস্তু। তাই বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।

৩. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার: পৃথিবীর কোন দেশ, কোন সম্পদ, কীভাবে ব্যবহার করে উন্নতি লাভ কবেছে তা বাণিজ্যিক ভূগোলের একটি আলোচ্য বিষয়। ফলে একটি দেশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

৪. জলবায়ু সম্বন্দ্বে জ্ঞান অর্জন: বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু, উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়।

অপ্রাকৃতিক পরিবেশ

১. জাতীয় উন্নতি/ অবনতি: পৃথিবীর সকল দেশ বা অঞ্চল সমানভাবে উন্নত নয়। তাই পৃথিবীর কোন দেশ কতখানি উন্নত বা পশ্চাৎপদ তা বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠে জানা যায়।

২. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: বাণিজ্যিক ভূগোলের জ্ঞান পরিকল্পনাবিদগণকে যথার্থ এবং কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে।

৩. শিল্প সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন: শিল্প সহায়ক ভৌগোলিক অবস্থান, অনুকূল জলবায়ু, জনশক্তি/শ্রমশক্তি, প্রয়োজনীয় রাজার ও পরিবহণ ব্যবস্থার বাস্তব ধারণা বাণিজ্যিক ভূগোল হতে পাওয়া যায়, যা শিল্প বিকাশে সহায়তা করে।

৪. পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা: যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান শর্ত হলো উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সামগ্রিক রূপরেখা সম্পর্কে জান লাভ করা যায়।

৫. বাণিজ্যিক জ্ঞান: বাণিজ্যিক জানের অন্যতম ক্ষেত্র হলো বাণিজ্যিক ভূগোল। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করা একান্ত প্রয়োজন।

৬. সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান: বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জীবনধারা সম্পর্কে জান লাভ করা যায়।

৭. প্রযুক্তির উন্নয়ন: বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠে বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ফলে, দেশের উন্নয়ন সহায়ক প্রযুক্তি আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর হয়। বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান জনা অপরিহার্য।

৮. পেশার পরিবর্তন: বংশ পরম্পরায় পরিবেশ কীভাবে মানুষের পেশার পরিবর্তন করে তা বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠে জানা যায়।

৯. সরকারকে সাহায্য: বাণিজ্যিক ভূগোলের জ্ঞান সরকারকে আমদানি ও রপ্তানি সম্পর্কিত নীতি তথা বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য নীতি প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

১০. আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য: পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় কি পরিমাণ পণ্যদ্রব্য আমদানি ও রপ্তানি হয় তা বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।

উপসংহার

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের বিকাশ, বিস্তার ও ক্রমবিবর্তন এবং প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের বিচার বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনাকে বাণিজ্যিক ভূগোল বলে। মানব জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

আশাকরি, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা বাণিজ্যিক ভূগোল কাকে বলে বা বাণিজ্যিক ভূগোলের সংজ্ঞা ও পাঠের গুরুত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

বাংলাদেশে ই-কমার্সের সমস্যা গুলো কি কি?

Related Posts