পড়ালেখা করতে গিয়ে আপনি নিশ্চই কিছু কিছু চিহ্নের সম্মুখীন হয়েছেন যেগুলোর জন্য আপনাকে কখনও থামতে হচ্ছে, কখনো একটু বিরতি দিতে হচ্ছে ইত্যাদি। হ্যাঁ বন্ধুরা, এগুলোই হচ্ছে বিরাম চিহ্ন বা যতি চিহ্ন। আবার এগুলোকে ছেদ চিহ্নও বলা হয়ে থাকে। আজ জানবো এইসব বিরাম চিহ্নের সংখ্যা কয়টি ও কি কি এবং কোথায় কোথায় ও কখন ব্যবহার করা হয়। তার আগে বিরাম চিহ্ন সম্পর্কে সামান্য তথ্য জেনে নিই।
বিরাম চিহ্ন কি?
একটি বাক্যের অর্থ ঠিক মত বোঝানোর জন্য বাক্যের মধ্যে এক কিংবা একাধিক জায়গায় কম বেশি থামার দরকার হয়। এ ছাড়া বাক্যের শেষে তো থামতেই হয়। এই থামার সাধারণ নাম বিরাম। আর যেসব চিহ্ন বিরাম বা থামার নির্দেশনা দেয় সেগুলোই বিরাম চিহ্ন। বিরাম চিহ্নকে ছেদ বা যতি চিহ্নও বলা হয়।
বিরাম চিহ্ন কয়টি?
বাংলা ভাষায় বিরাম চিহ্ন কয়টি তা নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে কিছুটা ভুল হবে। কারণ কোথাও বলা হয়ে বিরাম চিহ্ন ১২ টি, আর কোথাও বিরাম চিহ্ন ১৩টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই আর্টিকেলে আমি ১২ টি বিরাম চিহ্ন সম্পর্কে আলোচনা করবো।
বিরাম চিহ্নগুলো কি কি এবং কোথায় ব্যবহৃত হয়?
আসুন তবে বিরাম চিহ্নগুলো জেনে নিই। এবং সেই সাথে জেনে নিই এগুলো কখন, কোথায়, কোন পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবহৃত হয়।
১। কমা (,)
বাক্যের যেখানে সামান্য বিরতি দরকার হয়, সেখানে কমা বসে। যেমন- এক (১) সংখ্যাটি উচ্চারণ করতে যতটুকু সময় লাগে, কমা-চিহ্ন থাকলে ততটুকুই থামতে হয়।
২। সেমিকোলন (;)
যেখানে ‘কমা’ অপেক্ষা বেশি সময় বিরতির দরকার হয়, সেখানে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি খন্ডবাক্যের মাঝখানে সেমিকোলন (;) বসে। যথা- শাপলার মত শিমুও ভালো ছাত্রী। কিন্তু শিমুর ব্যবহার খারাপ; তাই লোকের নিকট তার আদর নেই।
৩। দাঁড়ি (।)
যেখানে বাক্য সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়, সেখানে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহৃত হয়। দাঁড়ি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে; যথা- শীতকালে বাংলাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
৪। প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)
কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসাতে হয়। যথা- তোমার নাম কি? সে কি খাবে?
আরও পড়ুন: ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ কৌশল সম্পর্কে আলোচনা
৫। বিস্ময়সূচক চিহ্ন (!)
যেখানে ভয়, বিস্ময়, হর্ষ, বিষাদ, ঘৃণা প্রভৃতি প্রকাশ পায়, সেখানে বিস্ময়সূচক চিহ্নের ব্যবহার হয়। হায়, অহো, আহা, ছি প্রভৃতি অব্যয়ের পর এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যথা- আহা! কি চমৎকার দৃশ্য!
৬। কোলন (:)
এক বিষয় থেকে অপর বিষয়ের প্রয়োগ, পূর্ব কথার নতুন অবস্থা ইত্যাদির জন্য এই চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যথা- সভায় সিদ্ধান্ত হলো: এক মাস পর নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
৭। ড্যাশ (-)
যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথকভাবাপন্ন দুই বা ততোধিক বাক্যের যোগাযোগ বোঝাতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যথা- তোমরা অশিক্ষিতদের শিক্ষিত করে তোল- এতে তোমাদের সম্মান যাবে না- বাড়বে।
৮। কোলন ড্যাশ (:-)
উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করলে অথবা স্পষ্ট কোন কিছু নির্ধারণ করলে কোলন ড্যাশ ব্যবহৃত হয়। যথা- ইসলামের পঞ্চভিত্তি:- কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব ও যাকাত।
৯। হাইফেন (-)
দুই বা ততোধিক পদ সমাসবদ্ধভাবে একপদীরূপে একত্রে সংযোগের জন্য পদের মধ্যে হাইফেন ব্যবহার করা হয়। যথা- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মাতা-পিতা।
১০। কোটেশন বা উদ্ধৃতি (“ ”)
কারও উক্তি প্রকাশ করতে অথবা উদ্ধৃতাংশ বোঝাতে কোটেশন বা উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়। যথা- সে বলল, “আমি আজ সিঙ্গাপুর যাচ্ছি”
১১। ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন (), {}, []
এই তিনটি চিহ্নই গণিত শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন- নদীয়ায় (বর্তমানে কুষ্টিয়া) তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
১২। বিন্দু (.)
ইংরেজি সংক্ষিপ্ত নামের বাংলা প্রতিবর্ণিতরূপে বিন্দু ব্যবহৃত হয়। যথা- স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্স, হিউম্যানিটিজ এন্ড ল্যাংগুয়েজ-এর ইংরেজি সংক্ষিপ্ত রূপ (SSHL)-এর বাংলা প্রতিবর্ণিত রূপ (এসএসএইচএল)। এসএসএইচএল-এ বিন্দুর যে ব্যবহার তা হলো- এস.এস.এইচ.এল।
অতএব বন্ধুরা, আমরা খুব সহজে জেনে নিলাম বাংলা ভাষায় বিরাম চিহ্ন কয়টি ও কি কি এবং কোথায় কোথায় এই চিহ্নগুলো ব্যবহার করা হয়। আশাকরি আর্টিকেলটি থেকে উপকৃত হয়েছেন। এরকম শিক্ষা বিষয়ক আরো নানা লেখা পেতে ভিজিট করুন সহজপড়া।