Home » সময়ানুবর্তিতা রচনা (১০০০ শব্দ) ২০ পয়েন্ট | SSC | HSC
রচনা সময়ানুবর্তিতা

সময়ানুবর্তিতা রচনা (১০০০ শব্দ) ২০ পয়েন্ট | SSC | HSC

by Susmi
2 comments

মানবজীবনের সময়ের স্বল্পতার কথা উপলব্ধি করে সময়ানুবর্তিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

হায় রে হৃদয়

তোমার সঞ্জয়

দিনান্তে, নিশান্তে শুধু পথ প্রান্তে ফেলে যেতে হয়

নাই নাই, নাই যে সময়।

সময়ানুবর্তিতা

ভূমিকা

পৃথিবীর মানুষের চিরন্তন বাণীহারা ক্রন্দন— ‘নাই নাই, নাই যে সময়।’ পৃথিবীর আকাশ-বাতাস, অরণ্য-পর্বত ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে ওঠে এই শব্দে— ‘নাই নাই, নাই যে সময়।’ সময়ের যাত্রা পথ অনন্ত প্রসারিত। আর ‘পথিক’ মানুষ হলো সময়ের সেই পথরেখা। সময়ের মতো মানবজীবন অন্তহীন নয়। যদি হতো, তাহলে মানুষের দুঃখ থাকতো না। সময় হলো নিরবধি, আর মানবজীবন সংক্ষিপ্ত । এখানেই গরমিল। মানুষ চায় তার সংক্ষিপ্ত জীবনে বিশাল কর্মের উদযাপন। কিন্তু সময় তা মঞ্জুর করে না। কর্ম উদযাপনে আগেই তার বিদায়ের ডাক এসে পড়ে। মানুষের কাছে সময় তাই অমূল্য ধন। সময় চলে যায় নদীর স্রোতের মতো। চিরন্তন প্রবহমানতাই এর মৌল বৈশিষ্ট্য। মুহূর্তের জন্যে কোথাও সে স্থির থাকে না, কারও জন্য অপেক্ষা করে না। মানুষের জীবনও সময়ের সেই অনন্ত ছন্দে বাঁধা। সময়ের অন্তহীন প্রবাহে সে ছুটে চলেছে জন্ম থেকে মৃত্যু অভিমুখে।

অন্যান্য রচনা:

হযরত মুহাম্মদ সাঃ রচনা বা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী

আমার প্রিয় কবি রচনা | তোমার প্রিয় কবি রচনা

অধ্যবসায় রচনা || রচনা অধ্যবসায়

সময়ের গুরুত্ব

সময়ের অস্থির ধাবমানতার জন্যেই মানুষের কাছে পরম মূল্যবান। সময় অনন্ত, কিন্তু জীবন সীমাবদ্ধ। তার এক প্রান্তে জন্ম, অন্য প্রান্তে মৃত্যু। এই জন্ম ও মৃত্যুর চক্রে জীবন চলমান। মানুষ চায় সময়ের মতো অন্তহীন জীবন; কিন্তু পায় না। মানবজীবনের চরম ট্র্যাজেডি এখানেই। পলায়নপর সময়ের দিকে তাকিয়ে বিষাদময় কণ্ঠে কবি সুইনবার্ন শেষ পর্যন্ত বলেন, ‘His life is a vision or a watch between a sleep and sleep” দুই প্রান্তেই ঘুম, ঘুমের মতো অন্ধকার। মাঝখানে শুধু একটুখানি চোখ মেলে চাওয়াই জীবন। জীবনের এই সীমাবদ্ধতার জন্য বাংলার লোককবিও অশ্রু বিসর্জন করে বলেছেন—

‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা মধ্যিখানে চর।’

একপারে জন অন্য পারে মৃত্যু; মাঝখানে চরের মতো জেগে ওঠা সংক্ষিপ্ত, সীমাবদ্ধ জীবন। অনন্ত সমুদ্রে সাঁতার দিয়ে এসে জীবনের সংক্ষিপ্ত চরে ওঠা; তারপর অনন্ত সমুদ্রে সাঁতার দিয়ে অন্ধকারে ভেসে চলে যাওয়া। এরই নাম জীবন যা শুধু ঘণ্টা আর মিনিটের সমাহার মাত্র। জীবনের এই সীমাবদ্ধতার জন্যেই সময় এত আদরের, এত মূল্যবান। সময় অনন্ত, কিন্তু জীবন তার অতিসামান্য ভগ্নাংশমাত্র। জীবন থেকে যে সময় একবার চলে যায় তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। সময়ানুবর্তিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা প্রকাশ করতে গিয়ে রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন,

“একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে একটা দিন ঝরে যাওয়া।”

তাই সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব সম্পর্কে যথার্থ সচেতন থাকা প্রয়োজন। সময় যে জীবনকে গঠনের সুযোগ দেয়, সময়কে কাজে লাগালেই সে সাফল্য অনিবার্য হয়ে ওঠে। সময়কে যারা অবহেলা করে, সময়ের মূল্যবোধ সম্পর্কে যারা সচেতন নয়, তারা কখনোই সুখের সন্ধান পায় না। সুতরাং মানবজীবনে সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম।

সময়ের অবহেলার পরিণাম

সময়ের অবহেলার পরিণাম খুব ভয়াবহ হয়। সময় হারানোর পর মানুষ হারানো সময়ের জন্য হাহাকার ও আফসোস করে। সীমাবদ্ধ জীবনে দুর্লভ সময়ের যে ভগ্নাংশটুকু পাওয়া যায় তার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই জীবন সার্থক এবং সুখময় হয়ে ওঠে। কাজেই জীবনের সংক্ষিপ্ত সীমায়তনের মধ্যে যে পরম মূল্যবান সময় আমরা হাতে পাই, তা যদি অবহেলা করি, যদি আলসাতরে সেই দুর্লভ সময় কাটিয়ে দিই, তাহলে তা হবে সময়ের নির্বোধ অপচয়মাত্র। সেই অপচয়ের পরিণাম আমাদের জীবনে একদিন মর্মান্তিক দুঃখ আর অনুশোচনা নিয়ে আসবে। তখন বুকফাটা আর্তনাদ করেও সময়কে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

মূল্যবোধের অর্থ

সময়ের মূল্যবোধ হলো, যে সময়ের যে কাজ তা সে সময়ে সম্পাদন করা। যে তা করে না, সে করে সময়ের অমর্যাদা এবং পরাজয়ই হয় তার জীবনের চরম পরিণতি। প্রকৃতপক্ষে, সময়ের যথার্থ মূল্যবোধই জীবনের সাফল্য অর্জনের সোপান। সময়ের অবহেলার জন্য সবাইকে ভবিষ্যতে অনুশোচনা করতে হয়। যে কৃষক ফসলের ঋতুতে ফসলের বীজ বপন না করে আলস্যে সময় অতিবাহিত করে, সে কিভাবে ফসল ওঠার সময় খামারপূর্ণ ফসল আশা করতে পারে। সময় চলে গেলে তখন আর কান্নাকাটি করেও লাভ হয় না। প্রবাদে আছে—

“সময়ে যে না দেয় চাষ, তার দুঃখ বার মাস”

মানবজীবনেও সেই একই কথা খাটে। জীবনে যখন শক্তি থাকে, সামর্থ্য থাকে তখন আলস্যে, অযথা কালহরণ করে জীবন কাটালে শেষ বয়সে অবশ্যই দুঃখ ভোগ করতে হয়। তাই সময়ের মূল্যবোধের গুরুত্ব অনেক।

সময় অপচয়ের অর্থ

সময়ের মূল্যবোধের অভাবের পিছনে আছে মানুষের নিরাসক্ত জীবনবোধ, আলস্য, উদাসীনতা এবং অদৃশ্য সময়ের নিঃশব্দ অনন্ত যাত্রা। সময়কে চোখে দেখা যায় না, তার অনন্ত যাত্রার ঘন্টাধ্বনিও শোনা যায় না। মানুষ তাই মনে করে, সময়ও বুঝি তার আলস্যের অনড় পাথরের মতো স্থির হয়ে আছে। তাই সময় পৃথিবীর অলস, কর্মবিমুখ মানুষদের ফাঁকি দিয়ে তার যাত্রাপথে সে প্রস্থান করে। সে কিন্তু পৃথিবীর সেই অলস, কর্মবিমুখদের আলস্য এবং কর্মবিমুখতাকে ক্ষমা করে না। সে তাদের কপালে ভবিষ্যতের অভিশাপ এঁকে দিয়ে প্রস্থান করে। কিন্তু জীবনের সঙ্গে বা সময়ের সঙ্গে যারা প্রবঞ্চনা করে না, সময়ও তাদের সঙ্গে প্রবঞ্চনা না করে তাদের জন্য আশীর্বাদ বর্ষণ করে যায়।

সময়ের সদ্ব্যবহার

শৈশব এবং কৈশোরই কর্মজীবনে প্রবেশের তোরণ দ্বার। এই সময়ই জীবনের প্রস্তুতির কাল। ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের সব দায়িত্বভার বহনের যোগ্যতা এ সময়েই অর্জন করতে হয়। শৈশবকালের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে ব্যবহার করলে এবং অমূল্য সময়ের অপচয় না করে তার প্রতিটি দুর্লভ মুহূর্তকে জীবনক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে পরবর্তীকালে সুখ ও শান্তি দু-ই পাওয়া যাবে। শৈশবেই আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, জীবন মূল্যবান এবং তার অন্তর্ভুক্ত সময় অত্যন্ত সীমিত ও অমূল্য। সেই অমূল্য সম্পদ আছে আমাদের সবার অধিকারে, সকলের হাতের মুঠোয়। সৎ এবং মহৎ কাজে লাগাতে পারলেই হবে তার পরম সদ্ব্যবহার। কর্মই সময়ের পরিমাপের একমাত্র মাপকাঠি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কে কত মহৎ এবং মূল্যবান কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তা দিয়েই তার সাফল্য বিবেচিত হয়। তাই জীবনে মানুষ কতদিন বেঁচেছে, তা বড় কথা নয়- জীবনে কত মহৎ কর্ম সম্পন্ন করেছে এবং সেসব কর্মানুষ্ঠানের ফলে মানবসমাজ কতটুকু উপকৃত হয়েছে, তা-ই তার সাফল্যের পরিচায়ক। তাই ছোট থেকেই সেই অভ্যাস গড়তে হবে যার ফলে জীবনে আসে সময়ানুবর্তিতা । সময়ানুবর্তিতা জীবনে সাফল্য লাভের চাবিকাঠি এবং সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমেই জীবনে আসে চরম সার্থকতা।। কবির ভাষায়-

“পরিশ্রম ধন আনে, কর্মে আনে সুখ, আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুঃখ । “

উপসংহার

সময়ের অপচয় একটি বড় অপরাধ। যারা সময় নষ্ট করে তারা জীবনে উন্নতি করতে পারে না। সময়ের যথার্থ মূল্যবোধই ব্যাক্তি এবং জাতীয় জীবনের সাফল্যের সোপান। যেহেতু সময় জীবনের সব সাফল্য ও সুখের উৎস, তাই প্রত্যেকেরই সময়ের মূল্য সম্বন্ধে সচেতন হওয়া এবং তার সদ্ব্যবহার করা উচিত। তবেই জাতি পাবে গতি, দেশ হবে সমৃদ্ধ, জীবন হবে আনন্দময়।

Related Posts

2 comments

শৃঙ্খলাবোধ রচনা বা নিয়মানুবর্তিতা রচনা (১০০০ শব্দ) November 9, 2023 - 2:14 pm

[…] আরও পড়তে পারো:   সময়ানুবর্তিতা রচনা (১০০০ শব্দ) ২০ পয়েন… […]

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা (১০০০ শব্দ) | SSC | HSC November 10, 2023 - 1:17 pm

[…] সময়ানুবর্তিতা রচনা (১০০০ শব্দ) ২০ পয়েন… […]

Comments are closed.