নিউরোসিস
নিউরোসিস বলতে এক ধরনের মৃদু মানসিক গোলযোগকে বুঝায় এবং এটি উত্তেজনা, উদ্বেগ, ভীতি ও স্নায়ু চাপ প্রভৃতির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। Neorosis এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো স্নায়ুরোগ বা স্নায়ুবিকার। তবে এতে কোন স্নায়ুতান্ত্রিক অস্বাভাবিকতা নেই। নিউরোসিস এর সমার্থক শব্দ হলো সাইকোনিউরোসিস ও নিউরোটিক রিঅ্যাকশন।
Walter J.Covile তাঁর ‘Abnormal Psychology’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “শিশুকালে পিতামাতার সাথে সম্পর্কের অসন্তুষ্টিজনিত ভীতি বা হীনমন্যতা বা অতিশাসনের প্রভাব শিশু মনে নিউরোটিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।”
মর্গান ও তাঁর সহলেখক এর মতে, নিউরোসিস তুলনামূলকভাবে মৃদু মানসিক গোলযোগ যা মাঝারি মানের অক্ষমতা সৃষ্টি করে, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাস্তব প্রত্যক্ষণ ক্ষমতায় বড় ধরনের বৈকল্যের সৃষ্টি হয় না।
বংশগত রোগ কি কি? |
সমাজকর্ম অভিধান এর ব্যাখ্যানুযায়ী, নিউরোসিস একগুচ্ছ মানসিক গোলযোগ সংশ্লিষ্ট রোগ যা স্নায়ুচাপ, অস্থিরতা এবং শারীরিক অসুবিধাজনিত অনবরত ও অসুবিধা সৃষ্টিকারী উদ্বেগের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে থাকে।
মনোবিজ্ঞান শব্দ কোষ-এ নিউরোসিস সম্পর্কে বলা হয়েছে, “একপ্রকার মৃদু মানসিক বৈকল্য। এতে ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্য গুরুতর হয় না এবং রোগীকে হাসপাতালে রাখার প্রয়োজন হয় না। এই রোগের প্রধান উপসর্গ উদ্বেগ।”
রোজেন ও গ্রেগরির (Rosen & Gregory) বলেছেন, নিউরোসিস হলো (নিউরোটিক রিঅ্যাকশন, সাইকোনিউরোসিস) “Emotional disturbance characterized by severe anxiety or exaggerated defense personality is grossly disorganized and contact with reality is good.”
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, নিউরোসিস হলো একগুচ্ছ মানসিক গোলযোগের সমষ্টি এবং এটি মানবদেহে ব্যক্তিক ও অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি করে। এতে করে রোগীর মধ্যে অবিশ্বাস, অস্থিরতা, ভীতি, উদ্বেগ, অস্থিরতা প্রভৃতির উদ্ভব হয়। যারা এ রোগে আক্রান্ত হয় তাদের নিউরোটিক বলে। এ রোগে আক্রান্তরা সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও তাদেরকে মনোচিকিৎসকের নিকট নিয়ে যাওয়া অতি জরুরি।
নিউরোসিস রোগের লক্ষণ
নিউরোসিসের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হলো-
১. নিউরোসিস রোগের অন্যতম লক্ষণ হলো দুশ্চিন্তা ও ভীতি।
২. উত্তেজনা ও ক্রোধশীলতা এ রোগের আরেক বৈশিষ্ট্য।
৩. এ রোগের আক্রান্তদের অন্তর্দৃষ্টির বড়ই অভাব থাকে।
৪. মানসিক ও দৈহিক লক্ষণ এ রোগে স্পষ্টই বুঝা যায়।
৫. এ রোগে আক্রান্তরা চাপ সহ্য করতে পারে কম।
৬. আক্রান্তরা প্রায়ই অসন্তোষ ও অসুখী জীবনযাপন করে।
৭. অহংকেন্দ্রিকতা এ রোগের অন্যতম লক্ষণ।
৮. এছাড়া নিউরোসিস রোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আত্মকেন্দ্রিকতা, সামর্থ্যানুযায়ী কাজ করার অক্ষমতা, অপরিপক্কতা, অসচেতন প্রেষণা, দৈহিক সমস্যা প্রভৃতি।
এনজাইম কি? এনজাইমের বৈশিষ্ট্য কি কি? |
নিউরোটিক রোগীর বৈশিষ্ট্য
নিউরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের বলা হয় নিউরোটিক। নিউরোটিক রোগীদের কতিপয় বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে দেয়া হলো:
১. নিউরোটিক রোগীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রোগী মৃদু মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
২. নিউরোটিক রোগীরা হীনমন্যতা ও চাপমূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
৩. তারা অহেতুক উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সমস্যাকে বড় করে দেখে।
8. এ ধরনের রোগীরা হিংসা ও আবেগের সম্মুখীন হয়।
৫. তাদের মধ্যে অন্তর্দৃষ্টির অভাব পরিলক্ষিত হয়।
৬. উত্তেজনা ও ক্রোধশীলতা নিউরোটিক রোগীদের বিশেষ লক্ষণ।
৭. তারা অহংকেন্দ্রিকতায় ভোগে এবং অসন্তোষ ও অসুখী হয়।
৮. তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা থাকে না।
৯. তারা অনমনীয় ও পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ করে থাকে।
১০. নিউরোটিক রোগীরা আত্মকেন্দ্রিক ও অতৃপ্তজীবনযাপন করে।
১১. তাদের মধ্যে অসচেতন প্রেষণা কাজ করে।
১২. এ ধরনের রোগীরা মনোজগত ব্যাথা, রোগবাতিক, পেশির প্যারালাইসিস প্রভৃতি সমস্যায় ভোগে।
১৩. নিউরোটিক রোগীরা বিভিন্ন দৈহিক সমস্যায়ও আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
পরিশেষে বলা যায়, নিউরোটিক রোগীরা সামাজিক জীবনযাপন করলে তারা উপর্যুক্ত সমস্যায় আক্রান্ত হয়। তারা মৃদু মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণের প্রকাশ ঘটে কম।