নেতৃত্ব কি বা নেতৃত্ব কাকে বলে এবং ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। তাই আজকের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ এই দুই বিষয় নিয়ে।
নেতৃত্ব কি ?
ইংরেজি “Leadership” শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো নেতৃত্ব। নেতৃত্ব শব্দটি মূলত নেতার গুণবাচক বৈশিষ্ট্যকে বর্ণনা করে। সাধারণভাবে নেতৃত্ব দ্বারা একদল লোককে পরিচালিত করা, আদেশ করা অথবা উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত করার কৌশলকে বুঝায়। নেতা হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি আলোচ্য কার্যগুলো সম্পাদন করবেন। এখানে নেতৃত্ব বলতে নেতার কার্যগুলোকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, নেতৃত্ব হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন নির্বাহী কয়েকজন কর্মীকে পরিচালনা করতে পারেন।
আরও পড়ুন: বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর
বিভিন্ন ব্যবস্থাপনাবিদ নেতৃত্ব কি সে সম্পর্কে নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিচে কয়েকটি সংজ্ঞা আলোচনা করা হলো-
১. চেস্টার-আই-বার্নার্ড-এর মতে, “নেতৃত্ব হলো মানুষের আচরণগত কতিপয় গুণ। এর দ্বারা সংঘবদ্ধভাবে অন্যান্যদের কাজ পরিচালনা করা হয়।”
২. G. R. Terry-এর মতে, “নেতৃত্ব হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলীয় উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কর্মীদের উপর প্রভাব বিস্তার করাার একটি কার্যক্রম।
৩. মি. কেড. ডেভিসের মতে, “নেতৃত্ব হলো উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে অন্যান্য লোকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসাহিত ও সাহায্য করার একটি প্রক্রিয়া।”
অতএব, উপরের আলোচনা হতে বলা যায়, যে বিশেষ কৌশলে একজন নেতা একদল কর্মীকে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের পথে পরিচালিত ও প্রভাবিত করেন তাকে নেতৃত্ব বলা হয়।
ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের গুরুত্ব
ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ব্যবস্থাপক সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। সঠিক ও সফল নেতৃত্ব ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জন সম্ভব হয় না। নিচে ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো-
১. দলীয় উন্নয়ন
নেতৃত্ব দলীয় প্রচেষ্টাকে সংগঠিত করে থাকে। সকল নেতার অধীনে কর্মীরা দলবদ্ধভাবে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। কারণ নেতা বা অনুসারীদের মধ্যে কোনরূপ দ্বন্ধ ও সংঘাত কাজ করে না।
২. সহযোগিতা বৃদ্ধি
সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেয়া হলে নেতার প্রতি কর্মীদের আত্মবিশ্বাস ও আনগত্য বৃদ্ধি পায়। এতে নেতা ও কর্মীদের মধ্যে সহযোগীতামূলক মনোভাব গড়ে উঠে।
৩. শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা
প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে নেতা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।
৪. উৎসাহ সৃষ্টি
যোগ্য নেতৃত্ব কাজের প্রতি কর্মীদের মনে উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। ফলে সম্পাদিত কাজের মান ভাল হয় ও সফলতা বয়ে আনে।
৫. একতা সৃষ্টি
শক্তিশালী নেতৃত্বের আওতায় যখন কর্মীরা কাজ করে তখন তারা নিজেদের এক ও অভিন্ন মনে করে এবং সে কারণে কর্মীরা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে।
৬. কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি
নেতৃত্ব সংগঠনে নিয়োজিত কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। এটা কর্মীদের ধনাত্মক প্রেষণা দান করে। ফলে তারা কাজের প্রতি অধিক মনোনিবেশ করে এবং তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৭. সহজ সমন্বয়
সঠিক নেতৃত্ব থাকলে কর্মীরা নিজের ইচ্ছা ও খেয়ালখুশিকত কাজ করতে পারে না। নেতা অধস্তনদের কাজের মধ্যে সহজেই সমন্বয় আনতে পারেন।
৮. মনোবল উন্নয়ন
যোগ্য নেতৃত্ব কর্মীদের মনোবল উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে। আর উচ্চ মনোবল অধিক উৎপাদনশীলতার প্রতীক।
৯. শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক
সঠিক নেতৃত্ব কার্যসম্পাদনে কর্মীদের সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করে ফলে তারা দ্রুততার সাথে কার্য সম্পাদনে উদ্যোগী হয়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মুনাফা বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
১০. প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন
নেতা কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মদক্ষতা ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি করে। শৃঙ্খলা আনয়ন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে ফলে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন সম্ভব হয়।
তো আশা করি নেতৃত্ব কি ও ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করেছেন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।