অনলাইন মার্কেটিং
অনলাইন মার্কেটিং ক্ষেত্রে আন্তঃক্রিয়াশীল অনলাইন কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক উপায়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পর ক্রেতা ও বিক্রেতা পণ্য, সেবা বা অন্যান্য তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। দু’ধরনের অনলাইন মার্কেটিং প্রণালি আছে। যথা- বাণিজ্যিক অনলাইন সেবা এবং ইন্টারনেট। বাণিজ্যিক অনলাইন গ্রাহকদের মাসিক ফি’র বিনিময়ে অনলাইন তথ্য ব্যবসায় সেবা প্রদান করা হয়। আর ইন্টারনেট হচ্ছে একটি ব্যাপক বিস্তৃত ও বিকশিত কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিশ্বব্যাপী ওয়েব যাতে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা বা মালিকানা থাকে না। উপরিউক্ত আলোচনায় অনলাইন ব্যবসায়ের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা-
১. এটি একটি আন্তঃক্রিয়াশীল পদ্ধতি;
২. এটির সাহায্যে পণ্য তথ্য প্রদর্শন ও অর্ডার গ্রহণ করা যায়;
৩. এটিতে ক্রেতা-বিক্রেতা ইলেকট্রনিক উপায়ে সংযুক্ত হয়;
৪. অনলাইন বাজারজাতকরণ বিশ্বব্যাপী পণ্য বিক্রয়ের আধুনিক পদ্ধতি।
পরিশেষে বলা যায়, অনলাইন কম্পিউটারের সাহায্যে ক্রেতা-বিক্রেতা সংযুক্ত হয়ে যে ব্যবসায় কার্যক্রম সম্পাদন করে তাকে অনলাইন মার্কেটিং বা অনলাইন ব্যবসায় বলে।
একজন আদর্শ বিক্রয় কর্মীর গুণাবলী কি কি – আলোচনা কর |
অনলাইন মার্কেটিং এর সুবিধা
অনলাইন বাজারজাতকরণে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ হয়। খুব সহজে এটির সাহায্যে মধ্যস্থকারবারিদের এড়ানো যায়। বিভিন্ন কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিকট অনলাইন বাজারজাতকরণ ব্যবসায় জনপ্রিয় হচ্ছে।
নিম্নে অনলাইন মার্কেটিং এর সুবিধা গুলো আলোচনা করা হলো-
ক. ক্রেতাদের জন্য সুবিধাবলি
বিভিন্নভাবে ক্রেতারা অনলাইন মার্কেটিং থেকে সুবিধা পেতে পারে। যেমন-
১. সহজে ক্রয় (Easy buying): অনলাইন বাজারজাতকরণ ব্যবস্থায় ক্রেতা খুব সহজে পণ্য ক্রয় করতে পারে। যেমন- ইন্টারনেট, ক্যাটালগ মার্কেটিং, প্রত্যক্ষ সাড়া, টেলিভিশন মার্কেটিং প্রভৃতির কল্যাণে ক্রেতা ঘরে বসে পণ্যের অর্ডার দিতে পারে।
২. সময় ও অর্থ বাঁচায় (Save time and money): চিরাচরিত কেনাকাটা পদ্ধতিতে ক্রেতাকে তথ্য সংগ্রহ বা পণ্য মূল্যায়ন করার জন্য অনেক দোকানে যেতে হতো। যাতে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় হতো। অনলাইন বাজারজাতকরণে ক্রেতা ঘরে বসে তথ্য সংগ্রহ বা পণ্য মূল্যায়ন করতে পারে বলে সময় ও অর্থ বাঁচে।
৩. সুবিধাজনক (Commenient): অনলাইন বাজারজাতকরণের ফলে ক্রেতাকে পথ পাড়ি দিয়ে, পাকিং এলাকা খুঁজে, দোকানে প্রবেশ করে, সাজানো পণ্যের মাঝখানের সরু পথ দিয়ে পণ্য পরীক্ষা করতে হয় না। ক্রেতা ঘরে বসেই মেইল ক্যাটালগ বা ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে তুলনা করে কিনতে পারে যা তাঁরা সুপার মার্কেট বা স্টোরে গিয়ে করত।
৪. সহজ এবং ব্যক্তিগত (Eazy and private): এক্ষেত্রে ক্রেতাকে ভিড়ের মধ্যে যেতে হয় না, বিক্রয়কর্মীকে মোকাবেলা করতে হয় না এবং বিক্রয়কর্মীর প্ররোচনামূলক ও আবেগময় কথাবার্তা এড়ানো সম্ভব হয়। ক্রেতা ব্যক্তিগতভাবে নিজের মতো করে অন্যের হস্তক্ষেপ ছাড়া কেনাকাটা করতে পারে। ব্যবসায়িক ক্রেতারা বিক্রয়কর্মীদের জন্য অপেক্ষা না করে পণ্য ও সেবা সম্পর্কে জানাতে পারে।
৫. ঝুঁকি হ্রাস (Reducing risk): অনলাইন বাজারজাতকরণ ক্রেতার অনেক ধরনের ঝুঁকি হ্রাস করে। যেমন- সরাসরি উৎপাদকের নিকট অর্ডার দেয়া হয় বলে ভেজাল, নকল পণ্য থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া এতে নগদ অর্থ নিয়ে দোকানে যাবার মতো ঝুঁকিও নিতে হয় না।
৬. কম মূল্যে ক্রয় (Buying at low price): বাজারজাতকরণ ব্যবস্থায় যত বেশি মধ্যস্থকারবারি থাকবে, প্রত্যেকের ব্যয় ও মুনাফার কারণে পণ্যের মূল্য তত বাড়বে। এক্ষেত্রে মধ্যস্থকারবারিদের এড়িয়ে সরাসরি উৎপাদকের নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করা হয় বলে ক্রেতা কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারে।
৭. অভিযোগ জানানো (Inform objections): এ ব্যবস্থায় ক্রেতা পণ্য সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ সরাসরি বিক্রেতা বা উৎপাদানকারীকে জানাতে পারে। প্রচলিত বাজারজাতকরণ ব্যবস্থায় মধ্যস্থকারবারির কারণে প্রায়ই ক্রেতার অভিযোগ উৎপাদনকারীর নিকট পৌছে না।
৮. জীবন ধাঁচ পরিবর্তন (Changing life style): অনলাইন বাজারজাতকরণ ব্যবস্থায় ক্রেতাকে দোকানে যেতে হচ্ছে না, ক্রেতা ঘরে বসে সারা পৃথিবীর বিশাল পণ্য সম্ভার থেকে পণ্য পছন্দ করতে পারে, বিক্রয়কর্মীর মুখোমুখি হতে হয় না, মুহূর্তের মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়া এতে সহজে কাউকে উপহারও ‘পাঠানো যায়। এসব বিষয় ক্রেতার জীবন ধাঁচকে বদলে দিয়েছে।
খ. বিক্রেতার জন্য সুবিধাবলি
অনলাইন মার্কেটিং বিক্রেতাকেও বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন-
১. ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি (Building costomer relationship): ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টির একটি জোরালো হাতিয়ার হচ্ছে অনলাইন বাজারজাতকরণ। অনলাইন বাজারজাতকারীরা সম্পব্য লাভজনক ক্রেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসহ ডাটাবেজ তৈরি করে বা এ ধরনের ডাটাবেজ কিনতেও পাওয়া যায়। এসব ডাটাবেজ ব্যবহার করে বিক্রেতা ক্রেতার সাথে শক্তিশালী ও নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।
২. নমনীয়তা (Flexibility): এ পদ্ধতিতে কোম্পানির অর্পণ ও কর্মসূচিকে পরিবর্তন বা প্রয়োজনমতো খাপ খাওয়ানো যায়। প্রতিদিন, একনকি প্রতি ঘণ্টায় পণ্য, (মূল্য, প্রসার বা অন্যান্য তথ্য প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করা যায়।
৩. ক্রেতা উপাত্ত ভাণ্ডার গড়ে তোলা (Building costomer database): এ পদ্ধতিতে বিক্রেতা ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগের জন্য। উপাত্ত ভাণ্ডার গড়ে তোলে। ফলে যে কোনো সময় বিক্রেতা তার কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা দলকে খুঁজে বের করতে পারে এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
৪. ব্যয় হ্রাস এবং গতি ও দক্ষতা বৃদ্ধি (Reducing cost and increasing speed and effciency): অনলাইন মার্কেটিং ইন্টারনেট ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যয় যেমন হ্রাস করা যায়, তেমনি গতি ও দক্ষতা বাড়ানো যায়। অনলাইন বাজারজাতকারীকে দোকান রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় করতে হয় না। এর ফলে ভাড়া, বিমা ও উপযোগ ব্যয়ও হয় না। যেমন- এশিয়ান স্কাই শপ টেলিভিশনে দীর্ঘসময়ব্যাপী বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্য বিক্রয় করে।
৫. বিশ্বব্যাপী মাধ্যম (Global medium): এটি একটি বিশ্বব্যাপী মাধ্যম। মুহূর্তের মধ্যে এর সাহায্যে বিভিন্ন দেশের ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ হতে পারে। বিদেশী ক্রেতাদের কাছে পণ্য তুলে ধরার জন্য এটিতে আলাদা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় না।
৭. কম ব্যয়বহুল: ই-কমার্সে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তার ব্যয় অনেক কম। যে কোনো ব্যক্তি একই প্রযুক্তি এবং একই খরচে এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। এখানে ব্যয়ের চেয়ে যে বিষয়ে মনোযোগ দিতে হয় তা হলো সঠিকভাবে অর্থ খাটানো এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারের দক্ষতা থাকা আবশ্যক।
বিজ্ঞাপনের মাধ্যম গুলি কি কি? |
৮. সহজ রাজস্ব উপার্জন: ই-কমার্স প্রযুক্তি রাজস্ব উপার্জন সহজ করেছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনাতেও জটিলতা অনেকাংশে কম। যেমন-দ্রব্য ও সেবা বিক্রয়, ভাড়া ও সরবরাহ সংক্রান্ত ব্যবসায় ই-কমার্স বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
৯. ব্যক্তিকীকরণ: ই-কমার্স প্রযুক্তি ব্যবসায় সেবা ব্যক্তিকীকরণ করতে পারে। ই-কমার্সের সাহায্যে বিক্রেতা তার পণ্য কিছু লোকের জন্য উন্মুক্ত করতে পারে আবার কারো ক্ষেত্রে এড়িয়ে যেতে পারে। অনেক সময় ঝামেলা এড়ানোর জন্য অপ্রয়োজনীয় ক্রেতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা গতানুগতিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়।
১০. প্রত্যক্ষ বিক্রয়: ওয়েব সাইটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবার উৎপাদনকারী কোনোরূপ মধ্যস্থকারী যেমন- পাইকার, ডিলার, খুচরা বিক্রেতা প্রভৃতি ছাড়াই সরাসরি ক্রেতাদের নিকট তা বিক্রি করতে পারে। উৎপাদনকারী ও ক্রেতার মধ্যে এরূপ সরাসরি ক্রয়- বিক্রয়ের ফলে বণ্টন পণ্যের ব্যয় কমে যায়, যা ক্রেতাদের কম মূল্যে পণ্য ও সেবা পাওয়ার সহায়ক।