খাদ্যে ভেজাল কি?
খাদ্য বলতে যেকোনো ধরনের খাদ্যশস্য, ভোজ্যতেল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি, ফলমূল, পানীয় জল ও অন্যান্য পানীয়কে বোঝায়, যা মানুষের জীবনধারণ, পুষ্টিসাধন ও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য আহার্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খাদ্যে ভেজাল (Adulterad Food) বলতে সাধারণত বিশুদ্ধ বা খাঁটি নয়, এমন খাদ্যদ্রব্যকে বোঝায়। কিংবা উৎকৃষ্ট দ্রব্যের সাথে নিকৃষ্ট দ্রব্যের মিশ্রণকে ভেজাল খাদ্য বলা হয়।
নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভেজাল খাদ্য
ক. খাদ্যদ্রব্যে মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর বা জীবনহানিকর কোনো রাসায়নিক যেমন- ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ভারী ধাতু বা কীটনাশক যেমন- ডিডিটি, পিসিবি তৈল ইত্যাদি) অথবা খাদ্য রঞ্জিত বা স্বাদযুক্ত করার জন্য বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহার।
খ. মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো খাদ্যদ্রব্য অথবা কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন কোনো উপাদান মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য।
গ. খাদ্যদ্রব্যের কোনো স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নেওয়ায় যদি মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়।
বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার আলোচনা কর |
ঘ. খাদ্যদ্রব্যের সাথে কোনো আইন বা বিধির অধীন নিষিদ্ধ ভিন্ন কোনো উপাদান মিশ্রিত করা, রঞ্জিত করা, আবরণ দেওয়া বা আকার পরিবর্তন করার ফলে যদি খাদ্যদ্রব্যের কোনোরূপ ক্ষতি সাধিত হয় বা এর গুণাগুণ বা পুষ্টিমান কমে যায়।
৬. যদি খাদ্যদ্রব্যে বিকিরণসহ কোনো দূষক বা বিষাক্ত উপাদান উপস্থিত থাকে যা খাদ্যদ্রব্যের প্রস্তুতকারী। ক্রেতা বা গ্রহণকারীর স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।
বস্তুত ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারী, ভোক্তা বা গ্রহণকারী প্রত্যেকেই স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। কেননা ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে নানারকম দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সেই সাথে অপুষ্টির সমস্যাও প্রকট হয়ে উঠছে।
খাদ্যে ভেজালের প্রকৃতি ও প্রভাব
চাল, ডাল, আটা, লবণ, তেল, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ঘি, পানীয় জল, মসলা, ওষুধ সর্বত্রই ভয়ঙ্কর ভেজালের মহোৎসব। জীবনধারণ, বিকাশ ও জীবন রক্ষাকারী এসব খাদ্যদ্রব্যে নিম্নোক্ত প্রক্রিয়ায় ভেজাল মিশিয়ে বাজারজাত করা হয়।
- মাছ, দুধ, ফলমূল ইত্যাদিতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন নামক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ।
- শাকসবজিতে মেশানো হচ্ছে কীটনাশক ও ফরমালিন। ফল গাছে মুকুল আসা থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকারক কীটনাশক।
- জিলাপি, চানাচুর, চিপস ইত্যাদি মচমচে করার জন্য মেশানো হচ্ছে মবিল।
- লবণে সাদাবালি, চায়ের পাতিতে কাঠের গুঁড়া, মসলায় ভুসি, চাল-ডালে বালি, ইটের গুঁড়া, মুড়িতে হাইড্রোজেন মেশানো হচ্ছে।
- বিস্কুট, চকলেট, আইসক্রিম, জুস, সেমাই, নুডলস ও মিষ্টিতে মেশানো হচ্ছে টেক্সটাইল ও লেদারের রং।
- শিশু খাদ্য বিশেষ করে গুঁড়া দুধে বিষাক্ত মেলামাইন পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া মৌসুমি ফলমূল যেমন আম, কমলা, আপেল, আঙ্গুর, কলা, টমেটো ইত্যাদি পাকাতে এবং বর্ণ আকর্ষণীয় করতে বিষাক্ত রং ও কার্বাইড মিপসিন, মার্শাল, ইথারিল, ডাই এলক্সির এবং পচন ঠেকাতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে খাদ্যের ঘ্রাণ, স্বাদ ও পুষ্টিমান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং খাদ্য বিষে পরিণত হচ্ছে।
সার্ক কি, কিভাবে গঠিত হয়, উদ্দেশ্য ও মূলনীতি গুলো কি কি? |
এসব বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাবার খেয়ে ভোক্তারা লিভার, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, অম্লত্ব, অন্ত্রনালির প্রদাহ, অরুচি, ক্ষুধামন্দা, অ্যাজমা, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, এমনকি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ভেজাল খাদ্য খেয়ে গর্ভবতী মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তবে ভেজাল খাদ্যের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয় বিধায় স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। এসব মরণব্যাধিতে আক্রান্ত ভোক্তাদের কষ্টার্জিত আয়ের বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা খাতে যা অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।