মধ্যপ্রাচ্যের মরুময় দেশগুলো খনিজ তেলে সমৃদ্ধ। এ দেশসমূহ যৌথভাবে বিশ্ব সম্মিতির শতকরা প্রায় ৬২ভাগের অধিকারী। পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় ২৫% খনিত তেল মধ্যপ্রাচো উৎপাদিত হয়।
খনিজ তেলের গুরুত্ব
বর্তমান যুগ যান্ত্রিক সভ্যতার যুগ। আর এ যন্ত্রের প্রাণশক্তি যোগাচ্ছে খনিজ তেল। নিম্নে খনিজ তেলের বিভিন্নমুখী গুরুত্ব আলোচিত
১. পরিবহণ ক্ষেত্রে: পরিবহণ ক্ষেত্রে খনিজ তেলের ব্যবহার ও গুরুত্ব সর্বাধিক। মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক, জাহাজ, রেলগাড়ি ইত্যাদি পরিচালনার ক্ষেত্রে খনিজ তেল একান্ত প্রয়োজন।
২. শিল্পের কাঁচামাল: শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে খনিজ তেগের গুরুত্ব অত্যধিক। কৃত্রিম রবার, প্লাষ্টিক, কৃত্রিম তন্তু, প্যারাফিন, ন্যাপথা, সার, কীটনাশক, রং প্রভৃতি শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে খনিজ তেপ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
খনিজ সম্পদ কাকে বলে? খনিজ সম্পদের গুরুত্ব আলোচনা কর। |
৩. শক্তি উৎপাদনে: বর্তমানে শক্তির মূল উৎস হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। আর এ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হলো তেল।
৪. কৃষিক্ষেত্রে: আধুনিক যুগে কৃষিক্ষেত্রে কৃষি যন্ত্রপাতি চালনা ও সংরক্ষণের জন্য খনিজ তেলের প্রয়োজন হয়।
৫. আলো ও আগুন জ্বালাতে: খনিজ তেলের উপজাত কেরোসিনের সাহায্যে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের গ্রামাঞ্চলে রাত্রে আলো জ্বালানো হয়। তেলের সাহায্যে যন্ত্র দ্বারা উৎপাদন করে শহর বন্দর আলোকিত করা হয়।।
৬. ঔষধ ও প্রসাধনী তৈরিতে: খনিজ তেলের উপজাত দ্বারা কীটপতঙ্গ বিনষ্ট করার ঔষধ, বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী যেমন- লিপিস্টিক, কোলক্রীম, ভ্যাসেলিন, স্লো, সেন্ট প্রভৃতি তৈরি করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেলের উৎপাদন ও বন্টন
মধ্যপ্রাচ্যের মোট তেল সম্পদের প্রায় ৮৫% তেল উত্তোলন করে সৌদি আরব, ইরাক, ইরান ও কুয়েত।
নিচে মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল উৎপাদনকারী দেশসমূহের বিবরণ দেয়া হলো-
১. সৌদি আরব: খনিজ তেল উৎপাদনে সৌদি আরব বর্তমান বিশ্বে প্রথম। ২০০৬ সালে এদেশে ৪৬.৭৮ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল উত্তোলিত হয়। এদেশের উৎপাদিত অধিকাংশ তেল পরিশোধনের পর ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। হাসা প্রদেশেই এদেশের প্রধান তেল খনিগুলো অবস্থিত।
২. ইরান: ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বে এর স্থান চতুর্থ। ২০০৬ সালে ইরানে ২০.৪৭ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল উত্তোলিত হয়। ইরানের বিশ্ববিখ্যাত আবাদান তেল শোধনাগার থেকে আবাদান বন্দরের মাধ্যমে তেল বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
৩. কুয়েত: এটি মধ্যপ্রাচ্যের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। ২০০৬ সালে এদেশে ১৩.৪৪ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল উৎপাদিত হয়।
৪. সংযুক্ত আরর আমিরাত: এটি মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। এদেশের দুবাই, আবুধাবী ও শারজাহ তেল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ২০০৬ সালে এদেশের নোট উৎপাদন ছিল ১২.৩০ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল। এদেশের উৎপাদিত অধিকাংশ ভেল বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
৫. লিবিয়া: লিবিয়া মধ্যপ্রাচ্যের পঞ্চম তেল উৎপাদনকারী দেশ। এদেশের সব জায়গায় কমবেশি তেল উত্তোলিত হয়। ২০০৬ সালে এদেশে ৮.৪৩ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল উৎপাদিত হয়।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর |
৬. কাতার: কাতার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ। ২০০৬ সালে কাতারে ৩.৬৩ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল উত্তোলিত হয়।
৭. মিসর: মিসর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম তেল উৎপাদনকারী দেশ। ২০০৬ সালে মিসরে ২.৬৫ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল উত্তোলিত হয়।
৮. ইরাক: এটি মধ্যপ্রাচ্যে ও বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ দেশ। ২০০৫ সালে এদেশে ৭.৫০ কোটি মেট্রিক টন খনিজ তেল উত্তোলিত হয় ইরাক নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর খনিজ তেল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেলের বাণিজ্য
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মধ্যপ্রাচ্যের তেল গুরুতপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ অঞ্চলের উত্তোলিত খনিজ তেল অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বর্হিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। শিল্পোন্নত দেশসমূহ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং এশিয়ার অনেক দেশ মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ্ তেল আমদানি করে থাকে।
উপসংহার
মধ্যপ্রাচ্য একটি তেলসমৃদ্ধ বলয়। এ অঞ্চলের তেলের ওপর পৃথিবীর অধিকাংশ শিল্পোন্নত দেশ নির্ভরশীল। মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি যেমন সম্পূর্ণভাবে তেলের ওপর নির্ভরশীল তেমনি বিশ্ব অর্থনীতি মধ্যপ্রাচ্যের তেল দ্বারা পরিচালিত।