Home » গ্রিক সভ্যতার অবদান আলোচনা কর
গ্রিক সভ্যতার অবদান

গ্রিক সভ্যতার অবদান আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

গ্রিক সভ্যতার অবদান

মাইসেনিয়া সভ্যতার পতনের পর অল্প সময়ের জন্য গ্রিসের ভূখণ্ডে অন্ধকার নেমে এসেছিল। সপ্তম ও ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে হেলেনীয় বিশ্ব বিভিন্ন বিজয়াভিযানের মধ্য-দিয়ে নতুনভাবে তার রাজনৈতিক সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ক্রমান্বয়ে গ্রিক পঞ্চম খ্রিস্টপূর্বাব্দে সভ্যতার স্বর্ণযুগের দিকে এগিয়ে যায়। মানব সভ্যতার ইতিহাসে যে কয়টি প্রাচীন সভ্যতা আধুনিক বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য ও দর্শনের উৎকর্ষতায় অসামান্য অবদান রেখে গেছে তার মধ্যে প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার অবদান অনস্বীকার্য। নিম্নের আলোচনায় গ্রিক সভ্যতার অবদান তুলে ধরা হলো-

১. কৃষি ব্যবস্থা

গ্রিক সমাজে জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় ছিল কৃষি। তবে গ্রিক সমাজ দাসনির্ভর হওয়ায় দাসরাই উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। কৃষিজীবী সম্প্রদায় ছিল মুক্ত মানুষ। কৃষকরা তাই সমাজের রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করত। দাসদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। এরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে প্রভুদের জমিতে ফসল ফলাত।

২. আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য

প্রাচীন গ্রিসের অনেকেই পেশাগতভাবে ব্যবসাকে জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিল। তারা প্রয়োজনের তাগিদে যেমন অনেক পণ্য আমদানি করত, তেমনি উদ্বৃত্ত পণ্যদ্রব্যও রপ্তানি করতো। কৃষিজমির স্বল্পতা এবং নিকটবর্তী স্থানে সমুদ্রের উপস্থিতি ও পোতাশ্রয়ের সুবিধার জন্য গ্রিকরা সমুদ্রপথে আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্যে পারদর্শিতা অর্জন করে।

৩. ধর্মীয় ক্ষেত্রে

স্রষ্টার নৈকট্য লাভের একটি শক্তিশালী ও স্থায়ী পন্থা হলো ধর্ম। ধর্মীয় ক্ষেত্রে গ্রিক সভ্যতার অবদম অনস্বীকার্য ও অপরিসীম। তারা বহু দেব-দেবীতে বিশ্বাসী ছিলেন। প্রাকৃতিক বিভিন্ন শক্তিকে পূজার পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ বীরদেরও তারা শ্রদ্ধার সাথে পূজা করতেন। তাদের কাছে দেবতা এ্যাপোলো ও দেবী এথেনা ছিলেন পূজনীয়। গ্রিকদের প্রধান দেবতা ছিলেন জিউস। ধর্মীয় আরাধ্যর মধ্যে শোভাযাত্রা, প্রার্থনা, বিভিন্ন দ্রব্য উৎসর্গ, ভোজের ব্যবস্থা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরও দেখুন:   গ্রিক সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর

৪. আইওয়নীয় যুগের বস্তুবাদী দর্শন

গ্রিক দর্শনের উৎপত্তি ঘটেছিল ৯০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সময়কালে এশিয়া মাইনরের উপকূলে অবস্থিত আইওনিয়ার অন্তর্গত একটি নগররাষ্ট্র মাইলেসীয় দার্শনিকদের প্রচেষ্টার ফল হিসেবে। এজন্য এ দর্শনকে মাইলেসীয় দর্শন নামেও অভিহিত করা হয়। তাদের অনুসন্ধানের মূল বিষয় ছিল প্রাকৃতিক জগতের চরিত্র নিরূপণ এবং তারা বিশ্বাস করত যে, জগতের সবকিছুর মূলে আছে একটি আদি বস্তু। বিশ্বজগৎ, গ্রহ, নক্ষত্র, পশু, প্রাণী সবকিছু একটিমাত্র বস্তু থেকে গঠিত হয়েছে। নিচে কয়েকজন আইওনীয় দার্শনিক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

  • Theles: আইওনীয় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা থেলিস বলেছেন, সব কিছুই সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে। তিনি সর্বপ্রথম ৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন।
  •  Pythagoras: পিথাগোরাসই প্রথম ব্যক্তি যিনি বিজ্ঞান ও দর্শনকে ঘনিষ্ঠভাবে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত করে দেখে পৃথিবী সম্পর্কে একটি গাণিতিক ব্যাখ্যা ও তত্ত্ব দেন, ‘যার নাম ‘ট্রাকটিস অব ডিকেড’।
  • Heraclitus: হেরাক্লিটাসের মতে, পরিবর্তনই একমাত্র চিরন্তন সত্য, জগতে চিরস্থায়ী বলে কিছু নেই। তিনি ‘Theory of Relativity’ প্রবর্তন করে দেখাতে চেষ্টা করেন যে, আমাদের দেহ-মন সবসময়ই পরিবর্তিত হচ্ছে, কিন্তু জীবন নামক প্রত্যয়টির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তাঁর মতে, সবকিছুই পরিবর্তন হয় কিন্তু পরিবর্তন নীতির কোনো পরিবর্তন হয় না।
  • Democratus: ডেমোক্রিটাস-এর মতে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছে এটম দিয়ে, যা দেখা যায় না এবং এ এটম হচ্ছে সবসময় গতিশীল। তবে এ এটমগুলোর মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা গুণগত নয়, বরং ভাদের মধ্যে আকৃতিগত, আকারগত, বিন্যাসগত ও অবস্থানগত পার্থক্য রয়েছে। তিনিই হচ্ছেন পৃথিবীর টেকনিক্যাল বিজ্ঞানী।
  • Shopists: এসব চিন্তাবিদদের সফিস্ট নামেও আখ্যায়িত করা হয়, যারা মানুষ ও পৃথিবীর উৎস ও বিকাশ সম্পর্কিত চিন্তার ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিসে একশ্রেণির যুক্তিবাদী দর্শনচিন্তার বিকাশ ঘটায়, তাদের মতে, কোনো বক্তব্যই চূড়ান্ত বা চিরসত্য নয়। তারা দার্শনিক বক্তব্যকে যুক্তির সাহায্যে প্রমাণ করে চলতেন বলে সফিস্ট চিন্তানায়করা ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের যুক্তিবাদী শিক্ষক এবং তারাই গ্রিসে দর্শন চিন্তার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন করেন।

এথেনীয় বা ভাববাদী যুগের দর্শন

৪৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারসিকদের বিরুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে এথেন্সের অভ্যুদয় ও সমৃদ্ধি ঘটে এবং এ যুগকে বলা হয় এথেনীয় যুগ। কিন্তু পেলোপনেসীয় যুদ্ধের ফলে এথেন্সের অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের ফলে গ্রিসের দার্শনিক চিন্তার প্রকৃতি বস্তুবাদী স্তর থেকে ভাববাদী স্তরে উন্নীত হয়। নিম্নে এদের সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

  • সক্রেটিস: গ্রিসের প্রখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস ছিলেন সোফিস্ট চিন্তাধারার অনুসারী। তিনি ছিলেন মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তানায়ক এবং তার দার্শনিক মতবাদ পরবর্তীকালে গ্রিসেই শুধু অনুভূত হয় নি অদ্যাবধি এর প্রভাব পৃথিবীতে প্রবাহমান। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে প্রত্যেকটি বস্তুই যাচাই করা এবং চিন্তার ক্ষেত্রে আবেগ বর্জন করাই ছিল তার শিক্ষার মূলকথা। শুধু কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মান্য করত নিজের বিবেকের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা কোনো সৎ নাগরিকের উচিত নয় বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। সক্রেটিসকে সত্যের পূজারি বলা হয়ে থাকে। তিনি সত্যের সন্ধানে ব্রতি হন এবং এ সত্যকে উপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন জ্ঞান। এজন্য তার প্রবচন ছিল ‘Knowledge is turth’ অর্থাৎ ‘জ্ঞানই সত্য’ এবং ‘Know themself’ অর্থাৎ ‘নিজেকে জান’। সক্রেটিসের শিক্ষা তৎকালীন শাসকবর্গের চোখে ছিল বিদ্রোহের সমতুল্য। তাই খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দে মহামতি সক্রেটিস সুবিধাভোগী শাসকগোষ্ঠীর কোপানলে পড়ে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হন।
  • প্লেটো: প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের ছাত্র। একথা বলা বাহুল্য যে, সক্রেটিসর দার্শনিক মতবাদ প্রচারে ব্রতী হন তার সুযোগ্য ও প্রিয় শিষ্য প্লেটো। বার্নস ও রালফ বলেন, “By far the most distinguished of Socrates pupils was Plato.” অর্থাৎ, সক্রেটিসের শিষ্যদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা নামকরা ছিলেন প্লেটো। প্লেটোর নীতি ও ধর্মীয় দর্শন পরস্পর সম্পর্কিত। সক্রেটিসের মতো তিনিও বিশ্বাস করতেন যে, জ্ঞানই নৈতিক উৎকর্ষের চাবিকাঠি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্লেটো অসামান্য অবদান রাখেন তার প্রখ্যাত গ্রন্থ “The Republic’-এর মাধ্যমে। প্লেটো তাঁর ‘The Republic’ গ্রন্থে রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র ইত্যাদি সরকার ব্যবস্থার বিবরণ দেন। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত রাজনৈতিক দার্শনিক। তিনি মনে করতেন যে, রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এবং স্বার্থান্বেষী মানুষের প্রভাব থেকে রাষ্ট্রকে মুক্ত করতে হবে। প্লেটোর অপর বিখ্যাত গ্রন্থ হচ্ছে ‘Dialogues of Socrates’। তিনি মোট ৩৬টি দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন।
  • অ্যারিস্টটল: সক্রেটিস ও প্লেটোর দার্শনিক চিন্তাকে এগিয়ে নিয়ে যান অপর বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল। বার্নস ও রালফ যথার্থই বলেন, “The last of the great champions of Scorates tradition was Aristotle.” অর্থাৎ সক্রেটিসের দর্শনের ঐতিহ্যের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন এরিস্টটল। তিনি ছিলেন প্লেটোর ছাত্র। অ্যারিস্টটলের মতবাদ ছিল উদার ও নিগূঢ়। অ্যারিস্টটল মনে করতেন যে, আকার ও বস্তু উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং পরস্পর নির্ভরশীল। এ দু’টির মিলনেই সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজগৎ। অ্যারিস্টটলের অন্যতম প্রধান অবদান তার ‘Politics’ গ্রন্থটি। এটিতে তিনি তার সুচিন্তিত রাজনৈতিক দর্শনকে ব্যাখ্যা করেন। তিনি একটি সুন্দর ও জনমঙ্গলকর রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করেন। তার জনপ্রিয় বচন হচ্ছে, ‘Man is by nature a political animal’, অর্থাৎ, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ রাজনৈতিক জীব।
  • জেনো: একজন স্টোয়িক দার্শনিক হিসেবে তিনি তার মতবাদের সপক্ষে এক স্কুল গড়ে তুলেছিলেন এবং তাঁর মতে, বিশ্বজগৎ মূলত সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও মাঝে মাঝে এতে অসংগতি দেখা দেয় এবং এর সমাধানের মধ্যে দিয়েই পরম মঙ্গল সাধন সম্ভব। স্টোয়িক স্কুল ক্রমে জেনোর দর্শন শিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত হয় যেখানে শেখানো হয় ‘আত্মশাসন ও কর্তব্য পালনই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট গুণ।’
  • এপিকিউরাস (৪৭০-৩১৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): এপিকিউরাসের মতে, চূড়ান্ত মঙ্গল লাভ করা যায় আনন্দ লাভের মধ্য দিয়ে কিন্তু ইন্দ্রিয়পরায়ণতা একটি স্বাভাবিক মঙ্গলজনক কর্ম হলেও তার মতে মানসিক ও সৎ চিন্তার আনন্দই প্রকৃত আনন্দ।

৫. সাহিত্য

প্রাচীন গ্রিকরা ছিল ভাব ও কল্পনাবিলাসী জাতি এবং তাদের বীরযোদ্ধাদের জীবনকাহিনির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যা তাদের সাহিত্যকর্মকে সমৃদ্ধ করেছিল। সাহিত্যচর্চায় গ্রিকদের অবদান অপরিসীম। নিম্নে তাদের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

  • মহাকাব্য: গ্রিক কবি হোমার নবম শতকে তাঁর বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়ড (Illiod) ও ওডিসি (Odyse)-এর মাধ্যমে এশিয়া মাইনরের ট্রয় নগরী কীভাবে গ্রিক জাতিগোষ্ঠী দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় সে কাহিনি লিপিবদ্ধ করেন। হোমার তার এ মহাকাব্যে বিভিন্ন দেব-দেবীর কাহিনিও অন্তর্ভুক্ত করেন।
  • শোকসংগীত: গ্রিক শোকগীতি রচিত হয় দেশপ্রেমিক কোনো বীরের উদ্দেশ্যে অথবা সমাজ সংস্কারকরে লক্ষ্য করে। শোকগাঁথার চেয়ে বাদ্যযন্ত্র সহকারে শোকসংগীত বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এসব শোকগীতি রচয়িতার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আইনজ্ঞ সোলান মিসনারমাস এবং থিওগনিস।
  • গীতিকবিতা: বার্নস ও রালফ যথার্থই বলেন, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে এবং পঞ্চম শতকের প্রথমার্ধে গীতিকবিতার (Lyric Poetry) আবির্ভাবে শোকগাঁথা (Elegy) ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে। গীতিকবিতা এক বিশেষ ধরনের তারের বীণার সাহায্যে প্রকাশ করা হতো।
  • বিয়োগান্ত নাটক: গ্রিকদের সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্যিক কৃতিত্ব হচ্ছে বিয়োগান্ত নাটক (Tragic drama)। তাদের অন্যান্য সাহিত্যকর্মের মতো এর জন্ম হয় দর্শনকে ভিত্তি করে। গ্রিক বিয়োগান্ত নাটকের জন্মদাতা ছিলেন এচিলাস (Aeschylus)।

৬. বিজ্ঞান

হেলেনিস্টিক যুগে সর্বাধিক বিকাশ সাধিত হয় বিজ্ঞান চর্চায়। এ যুগে আলেকজান্দ্রিয়া নগরী বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। জ্যামিতি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যাসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

  • গণিত: এ যুগে গণিতশাস্ত্রে প্রভূত উৎকর্ষ পরিলক্ষিত হয়। শ্রেষ্ঠ গাণিতিক ছিলেন ইউক্লিড। সমকালীন গাণিতিক জ্ঞানের উপর লিখিত তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম জ্যামিতির উপাদান। হেলেনিস্টিক যুগের অপর একজন প্রতিভাবান গণিতবিদ হলেন হিপারকাস। তাঁকে বলা হয় ত্রিকোণমিতির জনক।
  • জ্যোতির্বিদ্যা: হেলেনিস্টিক যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ ছিলেন এরিস্টারকাস। গবেষণার মাধ্যমে তিনি প্রথম প্রমাণ করেন যে, সূর্য পৃথিবীর চেয়ে বহুগুণ বড় ‘এবং তারকাগুলো পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। এ যুগের অপর একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ হলেন টলেমি।
  • ভূগোল: হেলেনিস্টিক যুগের ভূগোলবিদ্যা আলেকজান্দ্রিয়ার জ্যোতির্বিদ, কবি, ভাষাতাত্ত্বিক ও গ্রন্থাগারিক এবাটস্থিনিসের উপর নির্ভরশীল ছিল। এরাটস্থিনিস পৃথিবীর একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন এবং মানচিত্রে বিভিন্ন স্থানের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার জন্য অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্দেশ করেন।
  • পদার্থবিদ্যা: সাইরাফিউসের বিখ্যাত বিজ্ঞান আর্কিমিডিস সর্বপ্রথম পদার্থবিদ্যাকে বিজ্ঞানের নিজস্ব শাখা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি ভাসমান পদার্থের নিয়ম ও স্থিতিবিদ্যার কয়েকটি সূত্র আবিষ্কার করেন।
  • চিকিৎসাবিদ্যা: চিকিৎসাবিদ্যা হেলেনিস্টিক যুগে সর্বোচ্চ উৎকর্ষ লাভ করে। এ যুগের চিকিৎসাশাস্ত্রের অগ্রগতির দুই পুরোধা ছিলেন হিরোফিলাস ও এরাসিস্ট্রাটাস। হিরোফিলাসই প্রথম মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবচ্ছেদবিদ্যা চালু করেন এবং মানুষের স্বাগুবিক দুর্বলতার লক্ষণ আবিষ্কার করেন।

৭. লিপি আবিষ্কার

গ্রিকরা ফিনিশীয়দের কাছ থেকে লিখন পদ্ধতি আয়ত্ত করেছিল। ফিনিশীয়দের ২২টি বর্ণের সাথে ৪টি বর্ণ e, i, o u যোগ করে ২৬টি বর্ণমালা তৈরি করেছে, যা আধুনিক ইংরেজি ভাষায় গৃহীত বর্ণমালা হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

৮. শিক্ষা-সংস্কৃতি

শিক্ষা-সংস্কৃতির দিক দিয়ে গ্রিস খুবই উন্নত। এথেন্স ছিল গ্রিসের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান পীঠস্থান। স্পার্টার শিক্ষাব্যবস্থা ছিল সামরিক বিষয় ভিত্তিক। তা ছাড়া ব্যাকরণ, সঙ্গিত, ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কেও গ্রিকদের জ্ঞানের কমতি ছিল না। মোটকথা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গ্রিকদের ভূমিকা গৌরবোজ্জ্বল ও প্রশংসার দাবি রাখে।

৯. স্থাপত্য শিল্প

গ্রিকরা ছিল শৈল্পিক ও কল্পনাবিলাসী জাতি। গ্রিক স্থাপত্য ছিল সারল্য ও অধিক পরিমাপ সমৃদ্ধ এবং নিখুঁত। গ্রিক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হলো দেবী এথেনার মন্দির।

১০. খেলাধুলা

মানসিক বিনোদনের একটি অনন্য মাধ্যম হিসেবে খেলাধুলার ভূমিকা গ্রিকদের কাছে অপরিসীম। বিশ্ব অলিম্পিক খেলার অনন্য রূপকার গ্রিক জাতি। তারা দেবতার সন্তুষ্টি লাভ এবং গ্রিক নগর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সংহতি ও সৌহার্দ্য গড়ে তোলার লক্ষে, খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দে প্রথম অলিম্পিক খেলার আয়োজন করে। অলিম্পাস পর্বতের নামানুসারে এ খেলার নামকরণ করা হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রিক বা হেলেনীয় সংস্কৃতির নিকট আধুনিক বিশ্ব বিভিন্নভাবে ঋণী। বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, সংগীত, খেলাধুলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এখনো বিশ্বব্যাপী প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার অবদান অনস্বীকার্য।

 

Related Posts