নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ
যে প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পাদন করা হেয় থাকে তাকে নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া বলা হয়। এ প্রক্রিয়া কতকগুলো ধারাবাহিক পদক্ষেপের সমষ্টি। এ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপ সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বিশারদ ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন। W. H. Newman নিয়ন্ত্রণের ৩ টি ধাপ যথা- মান নির্ধারণ, কার্যফল পরীক্ষা ও রিপোর্ট দান এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থার কথা বলেছেন। নিউপোর্ট ও ট্রি ওয়াথা ৫ টি কার্য যথা- মান নির্ধারণ, কার্য পরিমাপ, মানের সাথে কার্যফলের তুলনাকরণ, এ দুয়ের পার্থক্য পরিমাপ এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। এগুলো বিবেচনা করে নিম্নে নিয়ন্ত্রণের পাঁচটি পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. মান নির্ধারণ
প্রথম নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হচ্ছে আদর্শ মান প্রতিষ্ঠা। এ মান হচ্ছে পরিকল্পনার কতকগুলো নির্ধারিত বিন্দু যার দ্বারা ব্যবস্থাপক পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। প্রত্যেকটি মান সুনির্দিষ্ট হয় এবং এর সময় বেঁধে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য কি হবে তার উপর ভিত্তি করেই মান নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ কি বা কাকে বলে? নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব আলোচনা কর।
২. সম্পাদিত কাজের পরিমাণ
এ পর্যায়ে যে মান নির্ধারিত হয়েছিল তার বিপরীতে প্রকৃত কার্যফল মাপা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মোতাবেক কতটুকু কার্য সম্পাদিত হয়েছে তা নিরূপণ করা হয়। ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, মৌখিক প্রতিবেদন ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজের অগ্রগতি বা ফলাফল পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
৩. মানের সাথে সম্পাদিত কাজের তুলনা
এই নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ এ নির্ধারিত মানের সাথে প্রকৃত কার্যফলের তুলনা করা হয়। আদর্শ মান বা প্রত্যাশিত ফলাফলের সাথে সম্পাদিত কার্যফলের তুলনা করে কোনো রকম বিচ্যুতি থাকলে তা নিরূপণ করা হয়। তবে যে সকল মান সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না তা তুলনা করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন- গ্রাহকদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি। এরূপ মান মূল্যায়ন করা যথেষ্ট দুরূহ কাজ।
৪. বিচ্যুতির কারণ নির্ধারণ
আদর্শ মানের সাথে সম্পাদিত কার্যফলের কোনো বিচ্যুতি বা পার্থক্য দেখা গেলে এ পর্যায়ে সঠিকভাবে তা নিরূপণ করা হয় এবং তা যথাযথ বিশ্লেষণ করে বিচ্যুতির কারণ নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এ কারণ নির্ধারণ অত্যন্ত অপরিহার্য বিষয়।
৫. সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ
নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ পদক্ষেপ হচ্ছে বিচ্যুতি বা ভুল-ত্রুটি শোধরানো। বিচ্যুতি নির্ধারণ ও তার সঠিক কারণ নিরূপণের পর এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ, অধস্তনদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, কর্মী গাফিলাতি রয়েছে কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো চিহ্নিত করেও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এ সংশোধনমূলক পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পরিসমাপ্তি ঘটে।