বাংলাদেশে ই-কমার্সের সমস্যা
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ। তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকের স্বল্পতা, প্রাযুক্তিক উন্নয়নে পশ্চাৎপদতা, দুর্বল অর্থনৈতিক অবকাঠামো, নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে অনীহা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব ইত্যাদি বিদ্যমান। ই-কমার্স আমাদের পশ্চাৎপদতার জন্য অনেক বিষয়কে আমরা দায়ী করতে পারি। এর মধ্যে একটু আশার কথা হলো আমাদের দেশে অল্প পরিসরে হলেও ই-কমার্স এর প্রচলন শুরু হয়েছে। নিচে বাংলাদেশে ই-কমার্সের যেসব সমস্যা পরিলক্ষিত হয় সেগুলো তুলে ধরা হলো-
১. ই-কমার্স সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব
বাংলাদেশে ই-কমার্স পদ্ধতিতে ব্যবসা একটি নতুন ধারণা। আমাদের ব্যবসায়ীদের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মরত কর্মীদেরও এ বিষয়ে শিক্ষার অভাব থাকায় আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা ই-কমার্সের উপর তেমন আগ্রহ দেখায় না। ই-কমার্স বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ই-কমার্স সংক্রান্ত জানাশুনা লোকের যথেষ্ট অভাব এ দেশে রয়েছে।
ই-কমার্সের সুবিধা গুলো কি কি? – আলোচনা কর |
২. দক্ষ জনশক্তির অভাব
ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য ওয়েবসাইট তৈরি, অর্ডার প্রসেস, পেমেন্ট সম্পাদন ইত্যাদি কার্য- সম্পাদনে দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোক প্রয়োজন। বাংলাদেশে এ ধরনের দক্ষ লোকের খুবই অভাব রয়েছে।
৩. দুর্বল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা
ই-কমার্সের উন্নয়নের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভৌত উপাদান উন্নত ও দ্রুতগতির টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য যে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নিম্নমানের ও নিম্নগতিসম্পন্ন। আমাদের দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের ল্যান্ড ফোনের মাধ্যমে সংযোগ গ্রহণ এবং কলচার্জ পার্শ্ববর্তী দেশ অপেক্ষা বেশি এবং সংযোগ গ্রহণও অনেক বেশি ঝামেলাপূর্ণ। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার এ রকম দৈন্য অবস্থা ই-কমার্সের উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।
৪. ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট সমস্যা
ই-কমার্স ব্যবসায়ের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সুষ্ঠু ও নিরাপদ ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থা। ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন অনলাইন ব্যাংকিং। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মাত্র কয়েকটিতে অন-লাইন ব্যাংকিং সুবিধা আছে। পাবলিক সেক্টরের ব্যাংকগুলো এখনও সনাতনী পদ্ধতিতে ব্যাংকিং করছে। তাছাড়া ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডেরও তেমন প্রচলন নেই। এ কারণে এদেশে ই-কমার্স তেমনভাবে প্রসার লাভ করছে না।
৫. সরকারের সহযোগিতার অভাব
ই-কমার্সের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল গড়ে তোলা, ই-কমার্স অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ আমাদের দেশে, বেসরকারি সেক্টর এত বেশি উন্নতি করতে পারেনি যে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া ই-কমার্স অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারে।
৬. সঠিক পরিকল্পনার অভাব
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে ই-কমার্সের উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার বক্তৃতা-বিবৃতিতে অনেক কথা বলেছে, কিছু পরিকল্পনাও কাগজে কলমে গ্রহণ করেছে কিন্তু বাস্তবায়ন কিছুই হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে আন্তরিকতার অভাবে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার ঘটেনি।
ই-কমার্স কত প্রকার ও কি কি? |
৭. সাইবার আইনের অভাব
তথ্য প্রযুক্তির উপযুক্ত ও বিধিসম্মত ব্যবহারের জন্য যথোপযুক্ত সাইবার আইন প্রয়োজন। বাংলাদেশে কার্যকর কোনো সাইবার আইন না থাকায় ই-কমার্স এর তেমন কোনো প্রসার ঘটেনি।
৮. কম্পিউটার ব্যবহারকারীর স্বল্পতা
বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। ব্যবহারকারীদের অনেকে কেবল ওয়ার্ড প্রসেসিং এর কাজ করতে পারে। ইন্টারনেটের ব্যয়বহুলতা, ব্যবহারকারীদেরকে আয়বর্ধক কাজের সুযোগ না থাকায় ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা এদেশে খুবই সামান্য যা ই-কমার্স প্রসারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায়। উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলো বাংলাদেশে ই-কমার্স সম্প্রসারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।