Home » বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব আলোচনা কর
বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব আলোচনা কর,

বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

বর্তমান সময়ে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ব্যবসার প্রচারণা তথা মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই মার্কেটিং এর একটি উপাদান হিসেবে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। চলুন আজকের লেখায় এ সম্পর্কে জেনে নিই।

বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব

বর্তমান শিল্প-বাণিজ্যিক যুগে বিজ্ঞাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিজ্ঞাপন শুধু উৎপাদক, পাইকার বা খুচরা ব্যবসায়ীদেরই পণ্য বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে না, এটি পরোক্ষভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে শিল্পায়নে গতিময়তার সৃষ্টি করে এবং পণ্যমূল্য হ্রাস করে ভোক্তাদের জীবন ধারণের মান উন্নয়নে সহায়তা করে। নিচে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো:

ক. অর্থনৈতিক গুরুত্ব

১. পণ্য ও ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি আদায়: কৌশলী বিজ্ঞাপন এমনভাবে পণ্য ও ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি আদায় করতে পারে যে, ভোক্তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে বিজ্ঞাপিত ব্র্যান্ড উপযুক্ত মূল্যে খরিদ করতে প্রয়াসী হয়।

২. চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পোন্নয়ন: নতুন পণ্যের জন্য বিজ্ঞাপন চাহিদা সৃষ্টি করে, আর পূর্ব থেকে প্রচলিত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সহায়ক পরিবেশের জন্ম দেয়। ফলে পণ্যের বাজার যেমন সৃষ্টি হয় তেমনি সম্প্রসারিতও হয়। উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি শিল্পোন্নয়নের অন্যতম নির্ণায়ক।

প্রমোশন মিশ্রণ কি? প্রমোশন মিশ্রণের হাতিয়ার গুলো কি কি?

৩. পণ্য সম্পর্কিত তথ্যের প্রচার: বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সম্ভাব্য গ্রাহকদের নিকট পৌঁছানো হয়। পণ্য সংক্রান্ত তথ্য প্রচার করার জন্য বিজ্ঞাপন একটি অতি জনপ্রিয় পদ্ধতি।

৪. প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি: যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সুনাম মূলধনের মতোই মূল্যবান। বিজ্ঞাপন পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধির প্রচেষ্টাও চালায়। যে কোম্পানির সুনাম যত বেশি, সে কোম্পানির পণ্যের চাহিদাও তত বেশি।

৫. চাহিদা ও সরবরাহে স্থিতিশীলতা আনয়ন: বিজ্ঞাপন একদিকে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, অন্যদিকে বর্ধিত চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফলে চাহিদার সাথে সরবরাহের সমতাবিধান হয়।

৬. ব্যবসায়ীদের সহায়ক: পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী ও অন্যান্য মধ্যস্থব্যবসায়ীরা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন উৎপাদকের পণ্য কোথায়, কিভাবে, কি মূল্যে পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে জানতে পারে। বিজ্ঞাপন তাদেরকে পণ্য সম্পর্কে সর্বদা অবহিত রাখে।

৭. প্রতিযোগিতায় উৎসাহ প্রদান: সব উৎপাদকই বাজার নিজের দখলে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। তারা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পণ্যের গুণাগুণে উন্নয়ন সাধন করে, মোড়কে চাকচিক্য আনায়ন করে কিংবা সেবার তারতম্য ঘটিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। ফলে বিজ্ঞাপনের বদৌলতে ভোক্তারা প্রতিযোগিতার সুফলসমূহ ভোগ করতে পারে।

৮. উৎপাদন খরচ হ্রাস: বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করা সম্ভব হলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্যাপকাহারে পণ্য উৎপাদন করতে পারে। ব্যাপক উৎপাদনের ফলে পণ্যের ইউনিট খরচ হ্রাস পায়। ইউনিট খরচ কমে যাওয়ার দরুন মূল্যও কম পড়ে।

৯. পণ্যের উৎকর্ষ সাধন: প্রতিযোগিতার মুখে সাফল্যজনকভাবে টিকে থাকতে হলে বিজ্ঞাপিত ব্র্যান্ডের মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। বিজ্ঞাপনদাতাগণ নিজেদের স্বার্থেই পণ্যমানের উৎকর্ষ সাধন করে থাকে। তাই বিজ্ঞাপন পরোক্ষভাবে প্রতিযোগিদের তুলনায় পণ্যের গুণগত উৎকর্ষ সাধনে সাহায্য করে।

১০. জাতীয় আয় বৃদ্ধি: কৌশলী বিজ্ঞাপন ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করে। এতে পণ্যের উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে উদ্যোক্তাদের লাভের পরিমাণ বেড়ে যায়। অধিক লাভ অধিক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে। বাড়তি বিনিয়োগ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ এনে দেয়। এতে লোকজনের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিস্বরূপ উৎপাদন আরও বেড়ে যায় এবং পরিণামে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।

১১. আন্তর্জাতিক বাজারে অনুপ্রবেশে সহায়তা: বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করে বিদেশী গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা যায়। বিদেশী বাজার স্বভাবতই প্রতিযোগিতামূলক। তাই কার্যকরী বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেখানে বাজার সৃষ্টি করতে হয়।

১২. ভোগের প্রবণতা বৃদ্ধি: বিজ্ঞাপনে মোহমুগ্ধ হয়ে ভোক্তার সুপ্ত মনে পণ্য ভোগের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। ফলে তার মধ্যে ভোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এই ভোগ ইচ্ছা নতুন পণ্যের প্রচলনে সহায়তা করে।

১৩. পণ্য ক্রয়ে সহজতা: বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতাসাধারণ পণ্যের গুণাগুণ, প্রাপ্তি স্থান, মূল্য ইত্যাদি জানতে পারে বলে তাদের পক্ষে পণ্য ক্রয় করা সহজতর হয়।

১৪. কম খরচে সংবাদপত্র প্রাপ্তি: বিভিন্ন কোম্পানি পত্রপত্রিকায় নিয়মিত বিজ্ঞাপন প্রচার করে বলে পত্রিকার মালিকগণ অত্যন্ত কম খরচে সংবাদপত্র/পত্র-পত্রিকা পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারে। এতে সমাজের লোকজন উপকৃত হয়।

খ. সামাজিক গুরুত্ব

১. উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন: বিজ্ঞাপন সর্বদাই উৎপাদকের পক্ষ থেকে পণ্য সম্পর্কিত একটি বক্তব্য নিয়ে ভোক্তার সামনে হাজির হয়। ফলে উৎপাদকের সাথে ভোক্তার একটি নৈর্ব্যক্তিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এতে পণ্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য মধ্যস্বব্যবসায়ী নিয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। ফলে পণ্যের মূল্য হ্রাস পায় এবং ভোক্তা কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করে নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারে।

২. বিক্রয়কর্মীদের ছত্রছায়া: বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতারা আগে থেকেই পণ্যের গুণাগুণ ও অন্যান্য বিবরণ সম্বন্দ্বে অবহিত হয়ে পণ্য কেনার জন্য দোকানে গমন করে। তাই পণ্য সম্বন্ধে তারা বিক্রয়কর্মীকে বিশেষ প্রশ্ন করে না। পণ্য সম্পর্কে গ্রাহকরা জেনেশুনে আসে বলে বিক্রয়কর্মীরা সহজেই পণ্য বিক্রয় করতে পারে এবং স্বল্প সময়ে অধিক সংখ্যক গ্রাহকের সেবা করতে পারে। এভাবে বিজ্ঞাপন বিক্রয়কর্মীদের ছাতা হিসেবে কাজ করে।

মার্কেটিং প্রমোশন কি – মার্কেটিং প্রমোশনের হাতিয়ার গুলো কি কি?

৩. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: বিজ্ঞাপন ত্রিবিধ উপায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। প্রথমত, বিজ্ঞাপিত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণের ফলে শিল্পোন্নয়ন প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হয়। ফলে শিল্পকারখানায় বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়। দ্বিতীয়ত, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপকাহারে বিজ্ঞাপন ব্যবহারের ফলশ্রুতি হিসেবে অসংখ্য বিজ্ঞাপনি সংস্থা আত্মপ্রকাশ করে এবং এগুলোতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তৃতীয়ত, বিজ্ঞাপন থেকে লম্ব আয়ের উপর ভিত্তি করে অনেক সংবাদপত্র প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়। সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানসমূহের বিভিন্ন বিভাগেও বহু লোকের কর্মসংস্থান হয়।

৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: জনগণের আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বিজ্ঞাপনের পরোক্ষ অবদান কম নয়।

৫. শিক্ষামূলক গুরুত্ব: বিষয়াপনের মধ্যে পণ্যের ব্যবহারবিধি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলে ভোক্তারা সহজেই তা আয়ত্ত করে নিতে পারে। বিজ্ঞাপনের এই শিক্ষামূলক দিকটি মোটেই উপেক্ষণীয় নয়। এতদ্ব্যতীত, বিজ্ঞাপন মধ্যস্বব্যবসায়ীদের প্রভাব হ্রাস করে। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের পণ্য সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি, পণ্যের গ্রাহক খুঁজে ব্যবসায়ীদের পতনের হাত থেকে রক্ষা এবং পণ্যের চাহিদা ও মূল্যের মৌসুমি হ্রাস-বৃদ্ধি রোধ করে ক্রেতাদের পণ্যের বহুবিধ উৎসের সন্ধান দেয় এবং ভোক্তাদের ফ্যাশন পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করে।

শেষকথা

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব নিশ্চই বুঝতে পারছেন। এবং এটি দিনকে দিন আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞাপন ছাড়া ব্যবসায়ের প্রসারণ যেন কল্পনাই করা যায় না।

Related Posts