Home » কাশগড় কোথায় অবস্থিত? কাশগড়ে কখন কার নেতৃত্বে বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হয়?
কাশগড় কোথায় অবিস্থত

কাশগড় কোথায় অবস্থিত? কাশগড়ে কখন কার নেতৃত্বে বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হয়?

কাশগড়ে বৌদ্ধধর্মের চীনের প্রভাব আলোচনা কর। 

by Susmi
0 comment

মহামানব ভগবান বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম যুগ যুগ ধরে এক দেশ হতে আরেক দেশে বিস্তৃতি লাভ করেছে। বৌদ্ধধর্মের মূল ভারতবর্ষে গ্রোথিত হলেও কালের পরিক্রমার বিভিন্ন রাজন্যবর্গের সহায়তায় বিভিন্ন দেশে প্রচার লাভ করেছিল। খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে মধ্য এশিয়ার নানাবিধ স্থানে বৌদ্ধধর্ম প্রচার প্রসার লাভ করেছিল এগুলির মধ্যে ইয়ার খন্ড, কাশগড়, কুছ, তুরফান খোটান উল্লেখযোগ্য। সকল মরুরাষ্ট্রগুলিকে বর্ণনা করা হয়েছে Small cells of Buddhism রূপে। তার মধ্যে কাশগড়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

কাশগড় কোথায় অবস্থিত?

কাশগড় মধ্য এশিয়ার সর্বাপেক্ষা পঞ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। উক্ত স্থানটি মধ্য এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। এটি জানতে পারা যায় যে, কাশগড়ে বৌদ্ধ ধর্ম দ্বিতীয় শতাব্দী হতে প্রচলিত ছিল। চীনা লেখকগণ কাশগড়কে বিভিন্ন নামে অভিহিত করেছেন।

কাশগড়ে কার নেতৃত্বে বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হয়?

কুষাণ রাজবংশের নেতৃত্বে কাশগড়ে প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হয়। দ্বিতীয় শতাব্দী হতে কুষাণগণ কাশগড়ের আভ্যন্তরীণ কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করেন। তারা তাদের মনোনীত একজন রাজপুত্রকে কাশগড়ের সিংহাসনে বসান। ঐসময় হতে কাশগড়ে বৌদ্ধ ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটে।

পরিব্রাজক ফাহিয়েনের বিবৃতি

চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন চতুর্থ শতাব্দীর শেষাংশে কাশগড় পরিভ্রমণে এসে তথায় বৌদ্ধধর্মের যথেষ্ট প্রতিপত্তি লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি তথাকার শাসকদের বৃহৎ পঞ্চবার্ষিক পরিষদের উল্লেখ করেছেন। উক্ত সভার অত্যন্ত জাঁকজমক সমারোহের বর্ণনা তিনি তার ভ্রমণ বৃত্তান্তে অতীব যত্নসহকারে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। রাজগণ সর্বস্থানের সবদিকের বৌদ্ধ শ্রমণদেরকে মুক্ত হস্তে দান করতেন বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন: 

কথাবত্থু গ্রন্থের রচনাকাল ও বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা কর। এই গ্রন্থকে কিভাবে ত্রিপিটকে অন্তর্ভুক্ত করা হল লিখ।

উপরন্তু তিনি বর্ণনা করেছেন যে, কাশগড়ের স্তূপে বুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলি, যথাভিক্ষাপাত্র, দন্তধাতু বুদ্ধের ব্যবহৃত অন্যান্য দ্রব্যগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। ফা-হিয়েন তথায় দুই হাজারেরও বেশী হীনযান সর্বাস্তিবাদী ভিক্ষু ও উহাদের অনুগামী অবলোকন করেছিলেন। তার নিকটবর্তী সময়ে অপরাপর কয়েক চীনা পরিব্রাজক যথাচেমং, ফায়ং ও তাওয়োর বিবৃতিতেও ফা হিয়েনের বিবৃতির সমর্থন বর্ণনা পাওয়া যায়।

উপরন্তু এটাও বর্ণিত আছে যে, ৪৫২ হতে ৪৬৬ খৃষ্টাব্দের মধ্যে কাশগড় হতে একজন দূতকে চীনা রাজদরবারে পাঠানো হয়েছিল। কথিত আছে, ধর্মদূত স্বয়ং বুদ্ধের দেহভস্ম বুদ্ধের ব্যবহৃত একটি প্রাচীন পোশাক উপহার স্বরুপ চীন দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন।

হিউয়েন সাঙের বিবৃতি

অপর চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৭ম শতাব্দীতে ভারতে এসেছিলেন। তিনি নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনকালে কাশগড় ভ্রমণ করেছিলেন। তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তে বলেছেন, কাশগড়ে বসবাসকারীগণ সাধারণত একনিষ্ঠ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। তিনি তথায় শত শত বৌদ্ধ বিহার বিহারে বসবাসকারী সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়ের অনুগামীদেরকে দেখেছিলেন। উক্ত ভিক্ষুগণ সমগ্র ত্রিপিটক বিভাষা অর্থকথাশাস্ত্র আবৃত্তি করতে পারতেন।

কথিত আছে, তারা ভারতীয় ভাষায় সম্পূর্ণ শাস্ত্র আবৃত্তি করতে পারতেন। যদিও শাস্ত্রগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে তাদের বিশেষ জ্ঞান ছিলনা। সুতরাং, এটাও অনুমেয় যে কাশগড়ে সম্ভবত ভারতীয় সংস্কৃত ভাষাতেই বৌদ্ধশাস্ত্রগুলি প্রচলিত ছিল।

কাশগড়ের বৌদ্ধধর্মে চীনের প্রভাব

কাশগড়ের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় চীনা হান বর্ষপঞ্জিতে। চীনা লেখকগণ কাশগড়কে বিভিন্ন নামে অভিহিত করেছেন, যথা১. সুলে (Shu-le), ২.ছেই-শ (Ch’ia-sha), ৩.কেই-ছ (K’eeh-ch’a), ৪.কিয়ে-শ (K’ie-sha) ইত্যাদি।

উক্ত বর্ণনানুযায়ী কাশগড়ে খৃষ্টীয় দশকের পূর্বে চীনের অধিকারে ছিল। হিউয়েন সাঙের ভ্রমণবৃত্তান্তে যে চীন রাজগণের প্রতিভূদের কথা আছে যারা কনিষ্কের রাজত্বকালে শীতকালে পাঞ্জাবে বাস করতেন। তারা গ্রীষ্মকালে কপিশ নামক স্থানে ভ্রমণের অনুমতি পেয়েছিলেন। তারা সম্ভবত কাশগড়েরই শাসক ছিলেন।

৬৫৮ অব্দে কাশগড় চীনা শাসনাধীন থাকা অবস্থায় পূর্ব ভারতের মগধাঞ্চলে ধর্মচন্দ্র নামক এক বৌদ্ধ আচার্য চীনদেশ হতে ভারতবর্ষে প্রত্যাবর্তনকালে কাশগড়ে কিছুদিন বাস করেছিলেন। ধর্মচন্দ্র ব্যতীত অপর দুজন বিখ্যাত ভারতীয় আচার্যের নামোল্লেখ করা যায় যারা চতুর্থ শতাব্দীতে কাশগর বাস করতেন। কথিত আছে, ভারতীয় পণ্ডিতাচার্য কুমারজীব (চীনা কিউমোলোশি) কাশগড়ে বসবাসকালে সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়ের অভিধর্মের ছয়টি পাদ বা বিভাগ শিক্ষা করেন।

সুতরাং উপরোক্ত ঘটনাটি কাশগড়ে অভিধার্মিক পণ্ডিতদের অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করে। কুমারজীব মধ্য এশিয়ার অপর স্থান কুছে ৩৪৩ অব্দে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তার পিতা ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মাতা কুছদেশীয়। কুমারজীব শৈশবকালেই কাশ্মীর এসে বসবাস করতে থাকেন। এটি জানতে পারা যায় যে, কুমারজীব হীনযান ত্যাগ করে মহাযান অবলম্বন করেছিলেন। তাঁর নিকট কুছ রাজার দুই পুত্র শত শাস্ত্র মাধ্যমিক শাস্ত্র শিক্ষা করেছিলেন।

ভারতবর্ষের সাথে চীনের যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কাশগড়ের বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল। বস্তুত, পরিব্রাজকগণ মধ্য এশিয়ার দুটি পাহাড়ী পথ ভ্রমণকালে কাশগড়ই ছিল সমতল পথগুলির সংযুক্তকারী স্থান। কাশগড়ের বিহারগুলি ছিল বৌদধ পরিব্রাজকদের স্বর্গস্বরূপ। কারণ পাহাড়ী ক্লান্তিকর চড়াই উৎড়াইয়ের পথে পরিভ্রমণ শেষে বিহারগুলির আতিথেয়তা পরিব্রাজকদের পথক্লান্তি দূরীভূত করত। কাশগড়ে দ্বিতীয় শতাব্দী হতে ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মের একচ্ছত্র প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে ভারতীয় ভাষা ভারতীয় লিপি তথায় প্রভূত প্রসার লাভ করে।

উপসংহার

উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, কাশগড়ে দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের প্রভাব বিস্তার লাভ করেছিল। কুষাণরাজ কনিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্ম কাশগড়ে দীর্ঘকাল স্থায়ী প্রতিপত্তি লাভ করেছিল। দেশের বৌদ্ধধর্মে চীনের প্রভাবও সুস্পষ্ট। কাশগড়ে বহু বৌদ্ধস্তূপের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে যেথায় মুসলমানদের ধ্বংসাত্মক আক্রমণের নিদর্শন অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

এছাড়ও পড়তে পারেন   

শ্রীলংকায় বৌদ্ধধর্ম প্রচারের ইতিহাস আলোচনা কর।

মহেন্দ্র কে ছিলেন? সিংহলে বৌদ্ধধর্ম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে মহেন্দ্র ও সংঘমিত্রার অবদান আলোচনা কর

 

Related Posts