নিয়োগের পর কর্মীদের কার্যোপযোগী করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। একমাত্র সঠিক প্রশিক্ষণই পারে দক্ষ, যোগ্য ও উদ্যমী কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে যা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জনে বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই আজকের আলোচনার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে। অর্থাৎ, প্রশিক্ষণ কি বা প্রশিক্ষণ কাকে বলে এবং প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের আর্টিকেলে।
প্রশিক্ষণ কি বা কাকে বলে?
প্রতিষ্ঠানের কর্মে নিয়োজিত নতুন ও পুরাতন কর্মীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা সৃষ্টি করার প্রক্রিয়াই প্রশিক্ষণ। অর্থাৎ প্রশিক্ষণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোনো বিশেষ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য নিয়োজিত পুরাতন ও নতুন কর্মীদের দক্ষতা, কর্মক্ষমতা ও প্রবণতা বৃদ্ধি করে তাদেরকে যোগ্য কর্মী হিসেবে তৈরি করা হয়।
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন কর্মীকে হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হয়। এটি কর্মীর পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং কাজের প্রতি তাকে আগ্রহান্বিত করে তোলে।
প্রশিক্ষণ কি বা প্রশিক্ষণ কাকে বলে সে সম্পর্কে দুটো বাস্তবধর্মী সংজ্ঞা নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. James Stoner এবং R. E. Freeman লেখকদ্বয়ের মতে, “প্রশিক্ষণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যা কর্মীর বর্হমান কর্মদক্ষতা সংরক্ষণ কিংবা উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত হয়।” ( A process designed to maintain or improve current job performance) ।
২. M. J. Jucious-এর মতানুসারে, “প্রশিক্ষণ একটি প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে, যার মাধ্যমে কর্মীদের কোনো নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের আগ্রহ, দক্ষতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধি করা হয়।” (Trainins is used to indicate any process by which the aptitudes, skills and abilities of employees to perform specific jobs are incresed.) ।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে বলা যায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা, কর্মদক্ষতা ও উদ্যম বৃদ্ধি করে সুনির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে।
প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
প্রশিক্ষণ একদিকে যেমন নবনিযুক্ত কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করে, তেমনি অন্যদিকে বর্তমানে কর্মরত কর্মীদের যুগোত্তীর্ণ জ্ঞানকে আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। Douglas McGregor এর মতে, প্রশিক্ষণ বুদ্ধি সংক্রান্ত জ্ঞান আহরণে সাহায্য করে, কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
নিচে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-
১. দক্ষতা বৃদ্ধি
প্রশিক্ষণ কর্মীদের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি করে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি পায় যা লক্ষ্য অর্জনকে সহজতর করে।
২. পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি
প্রশিক্ষিত কর্মী দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে কাজ করতে পারে। এতে কাজের মান উন্নত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে উৎপাদিত পণ্যেরও মান বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: কর্মী সংগ্রহ কি? কর্মী সংগ্রহের উৎস কয়টি ও কি কি?
৩. অপচয় রোধ
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ করা হলে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের অপচয় রোধও সম্ভব হয়।
৪. কার্যের সাথে পরিচয়
প্রশিক্ষণ নবনিযুক্ত কর্মীকে তার কাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ফলে নতুন কাজের কলা-কৌশল সম্পর্কে কর্মী অবগত হতে পারে।
৫. প্রতিযোগিতা মোকাবিলা
প্রশিক্ষণ কর্মীদের নতুন উদ্ভাবিত কৌশল সম্পর্কে জ্ঞানদান করে, ফলে কর্মীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার শিক্ষা পায় এবং প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সহজতর হয়।
৬. আধুনিক চিন্তা চেতনার উন্নয়ন
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীরা সর্বশেষ তত্ত্ব ও তথ্য সম্বন্ধে জানতে পারে। এছাড়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন নতুন চিন্তা চেতনায় একাত্ম হতে পারে।
৭. শ্রম ঘূর্ণায়মানতা ও শ্রম অসন্তোষ হ্রাস
প্রশিক্ষিত শ্রমিক কর্মীরা আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশলের সাথে পরিচিত হতে পারে। এর ফলে কর্মীদের দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং এতে শ্রম ঘূর্ণায়মানতা ও শ্রম অসন্তোষ হ্রাস পায়।
৮. দুর্ঘটনা হ্রাস
প্রশিক্ষিত কর্মীরা কার্যের সাথে জড়িত সম্ভাব্য ঝুঁকি ও কলকব্জার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়া এটি কার্য সম্পর্কিত বিপদাপদ এবং নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মাবলি সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দুর্ঘটনা হ্রাসে ভূমিকা পালন করে।
৯. আনুগত্য বৃদ্ধি
প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে কর্ম আনুগত্য ও প্রাতিষ্ঠানিক আনুগত্য সৃষ্টি করে।
তো প্রশিক্ষণ কাকে বলে এবং প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা লেখাটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এরকম আরও নানা লেখা পেতে ব্লগটির সাথেই থাকুন। অথবা আর কোন কোন বিষয়ে লেখা পেতে চান তা কমেন্টে জানান।