ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য
ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। এই পার্থক্যে যাওয়ার আগে এই দুটি শব্দ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু জেনে নিই।
প্রকৃত অর্থে ‘ব্যবস্থাপনা’ ও ‘প্রশাসন’ শব্দ দুটির মধ্যে এতই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে যে এদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা কঠিন। কখনো কখনো শব্দ দুটি একই অর্থে, কখনো ভিন্নার্থে, আবার কখনো পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন ব্যবস্থাপনা বিশারদ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বলে মত দেন। Henri Fayol, Newman and Kooniz তাদের মধ্যে অন্যতম।
তবে Speriegel, Oliver sheldon, E. F. L. Breach প্রমুখ বিশেষজ্ঞগণ যুক্তি প্রদর্শন করে ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। পার্থক্যগুলো নিচে উপস্থাপন করা হলো-
পার্থক্যের শিরোনাম | ব্যবস্থাপনা | প্রশাসন |
১. কাজের ধরন | লক্ষ অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রশাসন কর্তৃক প্রণীত পরিকল্পনা ও নীতি বাস্তবায়নই ব্যবস্থাপনার মুখ্য কাজ। | প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য মূল পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণই প্রশাসনের মুখ্য কাজ। |
২. কাজের পরিধি | পূর্ব-নির্ধারিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সংগঠন, তত্ত্বাবধান, সমন্বয় সাধন, প্রেষণা ইত্যাদি কাজের সাথে এটি সম্পর্কিত। | নীতি ও পরিকল্পনা তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ পর্যায়ের তত্ত্বাবধান কার্যের সাথে প্রশাসন সম্পৃক্ত। |
৩. ব্যাপ্তি | ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি শীর্ষ পর্যায়ে সংকুচিত থাকে কিন্তু মধ্য ও নিম্ন পর্যায়ে তা প্রসারিত থাকে। | প্রশাসনের কার্যাবলি শীর্ষ পর্যায়ে প্রসারিত থাকে এবং নিম্ন পর্যায়ে সংকুচিত থাকে। |
৪. পদবী | ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে ব্যবস্থাপক বলা হয়। | প্রশাসনে কার্যরত ব্যক্তিদেরকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলে। |
৫. দায়-দায়িত্ব | ব্যবস্থাপনা তাঁর কাজের জন্য সরাসরি প্রশাসনের নিকট দায়বদ্ধ থাকে। | অন্যদিকে প্রশাসন তার কাজের জন্য সাধারণত পরিচালক পর্ষদের নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। |
৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণ/বাস্তবায়ন | ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। | সংগঠনে উদ্ভূত যেকোনো সমস্যার সমাধানকল্পে প্রশাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। |
৭. সাংগঠনিক কাঠমো | ব্যবস্থাপনা সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিন্তু সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করে না। | পক্ষান্তরে প্রশাসন প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করে থাকেন। |
৮. অধীনতা | ব্যবস্থাপনা প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। | অপরদিকে প্রশাসন নিজ কার্যক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। |
৯. ক্ষমতা | ব্যবস্থাপনা তুলনামূলকভাবে কম ক্ষমতা ভোগ করে। | প্রশাসন অধিক ক্ষমতার অধিকারী। |
১০. শ্রমের প্রকৃতি | ব্যবস্থাপনা সাধারণত মানসিক ও কায়িক শ্রমের সাথে জড়িত। | প্রশাসন সাধারণত মানসিক শ্রমের সাথে জড়িত। |
মূলত প্রশাসন নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত কাজ করে, আর ব্যবস্থাপনা সে নীতির বাস্তবায়ন করে। এ কারণেই ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য করতে গিয়ে কেউ কেউ এদেরকে মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে তুলনা করেছেন এখাবে- ‘প্রশাসন যদি হয় মস্তিষ্ক, তবে ব্যবস্থাপনা হচ্ছে কান, নাক, চোখ’ ইত্যাদি।
সম্পর্কিত আর্টিকেল
ব্যবস্থাপনা চক্র কি? ব্যাখ্যা কর।
ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য কি কি? অথবা ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি আলোচনা কর।