ব্যবস্থাপনা কি একটি পেশা?-এই প্রশ্নটি অনেকের মাথায় ঘুরপাক খায়। তাই আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু ব্যবস্থাপনা আসলেই পেশা কিনা।
ব্যবস্থাপনা কি একটি পেশা – ব্যাখ্যা
কোনো বিশেষ বিদ্যায় বৃত্তিমূলক জ্ঞান আহরণ করে পারদর্শিতা ও দক্ষতা অর্জনের পর কর্মজীবনে এর প্রয়োগ ও ব্যবহার দ্বারা জীবিকা নির্বাহকে পেশা বলে। এক কথায় বলা যায় বিশেষায়িত জ্ঞান সম্বলিত কোনো কাজ বা বৃত্তিকে সাধারণ অর্থে পেশা বলে। পেশার জন্য বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়।
অধ্যাপক McFarland পেশার নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন:-
১। পেশায় একটি বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও পদ্ধতি থাকে।
২। পেশায় প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রথাগত একটি পদ্ধতি থাকে।
৩। পেশাদারীদের দ্বারা গঠিত একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সংঘ বা সমিতি থাকে।
৪। পেশায় একটি সুসংগঠিত আচরণ বিধি থাকে।
৫। পেশায় পারিশ্রমিক ধার্য করার রীতি থাকে।
৬। পেশাদারী প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ গ্রহণ ও পেশাগত বৃত্তির অনমতিপত্র বা সনদ প্রদানের ব্যবস্থা থাকে।
আরও পড়ুন
ব্যবস্থাপনার স্তর গুলো কি কি? বা ব্যবস্থাপনার তিনটি স্তর কি কি?
ব্যবস্থাপনা কি? ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা কর।
ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য কি কি? অথবা ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি আলোচনা কর।
একইভাবে K.R. Andrews পেশার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেছেন। যথা:
ক) বিশেষায়িত জ্ঞান,
খ) এরূপ জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগ,
গ) পেশাদারীর সামাজিক দায়িত্ব,
ঘ) আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও
ঙ) পেশার সামাজিক স্বীকৃতি।
উপরে বর্ণিত পেশার বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এসবের অধিকাংশই বিদ্যমান রয়েছে। যেমন-
১। ব্যবস্থাপনায় কতকগুলো রীতি-নীতি ও পদ্ধতি রয়েছে যা সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য।
২। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণ এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে।
৩। ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট দক্ষতা ও বিশেষ জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে।
৪। ব্যবস্থাপনার একটি দর্পণ ও সুনির্দিষ্ট আচরণবিধি রয়েছে। পেশাদারী ব্যবস্থাপককে এসব আচরণবিধি মেনে চলতে হয়।
৫। ব্যবস্থাপনায় পেশাদার ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টার আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায়।
৬। অধুনা বিভিন্ন দেশে ব্যবস্থাপনা সংঘের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, যেমন- আমেরকিান ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।
৭। ব্যবস্থাপনা একটি শাস্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
৮। ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা দানের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
৯। ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞাপনের প্রয়োগ ঘটায় কার্য সম্পদানের আদর্শ মান ও সময় নির্ধারণের জন্য সময়, শ্রান্তি ও গতি নিরীক্ষা কার্য সম্পাদন করতে হয়।
১০। বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োগকল্পে সঠিক পরিকল্পনা, সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উদ্ভাবন ও ব্যবহার করতে হয়।
ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান থাকার কারণে ক্রমে ক্রমে ব্যবস্থাপনা পেশায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে শিল্পায়নের যুগে মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাবে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ব্যবস্থাপনা নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এরূপ অবস্থায় ব্যবস্থাপনাকে পেশা হিসেবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে উন্নত দেশগুলোতে ব্যবস্থাপনা পেশা হিসেবে স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা লাভ করছে; সৃষ্টি হচ্ছে নানা ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান; আবির্ভূত হচ্ছে ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরামর্শদাতাদের। ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সংঘ ও সমিতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সারা বিশ্বব্যাপী। বর্তমান ব্যবসায়ের নানা জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত হওয়ার নানা সুযোগ। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, ব্যবস্থাপনা আজ পেশায় পরিণত হয়েছে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত কলাকৌশল প্রয়োগের দ্বারা প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় বলা যায়, ক্রমেই ব্যবস্থাপনা একটি পেশা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।