বিশ্বের যেসকল অঞ্চলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অনুভূত হয় তাকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল বলে।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল
সামগ্রিকভাবে নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলীর মহাদেশগুলোর পশ্চিম প্রান্তে যে বিশেষ ধরনের জলবায়ু দেখা যায় তাকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। ভূমধ্যসাগর ও তার তীরবর্তী দেশগুলোতে এ জলবায়ুর প্রভাব ও বিস্তৃতি সর্বাধিক বলে এ জলবায়ুকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলা হয়। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অধ্যুষিত অঞ্চলকেই ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল বলে।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহ মহাদেশসমূহের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত বলে এ অঞ্চলকে ‘পশ্চিম প্রান্তীয় অঞ্চল’ও বলা হয়। নিচে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলো-
উৎপত্তি: আয়ন বায়ু, প্রত্যয়ন বায়ুর কারণে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর। উৎপত্তি হয়ে থাকে।
১. অবস্থান: উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের মহাদেশসমূহের পশ্চিম উপকূলে ৩০°থেকে ৪৫° উত্তর-দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল অবস্থিত।
মৌসুমী জলবায়ু কাকে বলে? মৌসুমী জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ |
২. অন্তর্ভুক্ত এলাকাসমূহ: নিম্নে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত এলাকাসমূহ উল্লেখ করা হলো-
মহাদেশ/অঞ্চল | দেশ |
এশিয়া | সিরিয়া, তুরস্ক, লেবানন, ইসরাইল, প্যালেস্টাইন, জর্ডান। |
ইউরোপ | স্পেন, পর্তুগাল, দক্ষিণ ফ্রান্স, ইতালি, যুগোশ্লাভিয়া, গ্রীস, সাইপ্রাস, আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া। |
আফ্রিকা | মিসর, লিবিয়া, তিউনিশিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া। |
উত্তর আমেরিকা | যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া। |
দক্ষিণ আমেরিকা | চিলির পশ্চিমাংশ। |
ওশেনিয়া | অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও নিউজিল্যান্ডের উত্তরাংশ। |
৩. জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য: বৃষ্টিহীন শুল্ক গ্রীষ্মকাল এবং বৃষ্টিবহুল আর্দ্র শীতকাল এ অঞ্চলের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ুর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচিত হলো-
ক. তাপমাত্রা: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক এবং উষ্ণ থাকে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ২১°- ২৭° সে. এবং শীতকালে ৪° – ১০° সে. তাপমাত্রা বিরাজ করে। শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য প্রায় ১৭° সে.।
খ. বায়ুপ্রবাহ: ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু আয়ন বায়ু এবং প্রত্যয়ন বায়ু দ্বারা প্রভাবিত।
গ. বৃষ্টিপাত: এ অঞ্চলে কেবলমাত্র শীতকালেই বৃষ্টিপাত হয়, বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত স্থানভেদে ৩৮ সেমি থেকে ৭৬ সেমি-এর মতো হয়।
ঘ. উপকূলীয় অবস্থিতি: এ জলবায়ুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে এর অবস্থিতি। সমুদ্র তীরে অবস্থিত দেশগুলোর ওপর এ জলবায়ুর প্রভাব অধিক।
৪. উদ্ভিজ্জ: সাধারণত দীর্ঘ ও শুল্ক গ্রীষ্মকালের উষ্ণতা সহ্য করার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ভিদ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে জন্মে। দীর্ঘপত্রযুক্ত চিরহরিৎ এবং মাঝে মাঝে সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনভূমি দেখতে পাওয়া যায়। তবে ছোট ছোট গাছপালা ও ঝোঁপঝাড় অধিক দৃষ্টিগোচর হয়।
৫. কৃষিকার্য: কৃষিকার্য এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান উপজীবিকা। পার্বত্য উপত্যকা ও সমভূমি অঞ্চলে অধিকাংশ কৃষিকাজ হয়ে থাকে। এ অঞ্চল ফল চাষের জন্য বিখ্যাত।
৬. জীবজন্তু ও প্রাণিজ সম্পদ: তৃণভূমির অভাবহেতু এ অঞ্চল পশুপালনের জন্য তেমন উপযোগী নয়। এ অঞ্চলের জীবজন্তুগুলোর মধ্যে গাধা, ঘোড়া, খচ্চর, ভেড়া, ছাগল, মেঘ, শূকর, উট ও গরু প্রধান।
৭. শিল্প: ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল শিল্পক্ষেত্রে বেশ উন্নত। এ অঞ্চলের প্রধান শিল্পগুলো হলো- সাবান, কাচ, রেশম, পশম, বস্ত্র, মদ, চিনি ইত্যাদি।
৮. খনিজ সম্পদ: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। লিবিয়া, মিশর, আলজেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার খনিজ তেল, মরক্কো ও ইতালিতে গন্ধক ও মর্মর পাথর পাওয়া যায়।
৯. পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো শিল্পে সমৃদ্ধ বলে পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। এ অঞ্চলে সড়কপথ, রেলপথ, জলপথ, আকাশপথ পরিবহণ ও যাতায়াতের সকল উপায় উন্নত।
নিরক্ষীয় জলবায়ু কাকে বলে? নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সমূহ |
১০. ব্যবসা-বাণিজ্য: উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। এ অনুলের দেশগুলো সমুদ্রপথে পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চলের সাথে বাণিজ্য করতে পারে।
১১. অধিবাসী ও তাদের কার্যকলাপ: এ অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রধান উপজীবিকা কৃষিকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প। এ অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী শিক্ষিত, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় খুবই পারদর্শী এবং সংস্কৃতিমনা ও মার্জিত বুচির অধিকারী। জলবায়ুর প্রভাবে অধিবাসীরা খুব কর্মঠ ও পরিশ্রমী হয়।
১২. অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ: প্রাচীনকাল হতে এ অঞ্চলের অধিবাসীরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নত। এ অঞ্চল কৃষি, শিল্প, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য সব দিক দিয়েই সমৃদ্ধ। অদূর ভবিষ্যতে সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হবে।।
উপসংহার
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যের কারণে সারা বিশ্বে এ অঞ্চলের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অঞ্চলের জলবায়ু বসবাসের উপযোগী ও স্বাস্থ্যকর।-