Home » বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি আলোচনা কর
বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি আলোচনা কর,

বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি আলোচনা কর

by Susmi
0 comment

ভূগোলের অন্যতম একটি শাখা বাণিজ্যিক ভূগোল। তবে এটি ভূগোলের একটি শাখা হলেও এর পরিধি ও কার্যক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। 

বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি

মানুষ, পরিবেশ ও মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এ তিনটির সম্মিলিত বিস্তৃতিই বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতায় পড়ে।

নিচে বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতা বা ক্ষেত্র বা পরিধির বিবরণ দেওয়া হলো-

ক. মানুষ

বাণিজ্যিক ভূগোলের মূল আলোচ্য বিষয় মানুষ। মানুষ ও তার ক্রিয়াকলাপকে কেন্দ্র করেই বাণিজ্যিক ভূগোল গড়ে উঠেছে। বাণিজ্যিক ভূগোল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের অতীত ও বর্তমান জীবনযাপন প্রণালি সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করে। পরিবেশ মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে এবং জীবনযাপন প্রণালিকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই পরিবেশ ও পরিবেশের সাথে মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সম্পর্ক আলোচনা করাও বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতাভূক্ত।

বাণিজ্যিক ভূগোল কাকে বলে? বাণিজ্যিক ভূগোল পাঠের গুরুত্ব কি কি?

খ. পরিবেশ

পরিবেশের যে সকল উপাদান মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে বর্ণিত হলো-

১. জলবায়ু: পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ু ও এর বৈশিষ্ট্য এবং অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর জলবায়ুর প্রভাব বাণিজ্যিক ভূগোলের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।

২. ভূ-প্রকৃতি: ভূ-প্রকৃতির বিভিন্নতার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে যে পার্থক্যের সৃষ্টি হয়, তার পর্যালোচনা বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।

৩. মৃত্তিকা: পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকার প্রকারভেদ, ক্ষমতা, গঠন প্রকৃতি ইত্যাদির ব্যবহার, উৎপাদন বর্ণনা ও তথ্য প্রদান এবং মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর মৃত্তিকার প্রভাব আলোচনাও বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।

৪. উদ্ভিদ: সমগ্র পৃথিবীর উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগ, বণ্টন, ব্যবহার, তৃণভূমি, বনজ সম্পদ ও এদের ব্যবহার এবং বনভূমির আয়তন, বিস্তার ইত্যাদির বর্ণনা ও তথ্য প্রদান বাণিজ্যিক ভূগোলের অন্যতম আলোচ্যসূচি।

৫. জীবজন্তু: বিভিন্ন অঞ্চলের জীবজন্তু, এদের আচার-আচরণ ও অর্থনৈতিক ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।

৬. খনিজ সম্পদ: পৃথিবীর কোন অঞ্চল কোন জাতীয় খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ, এদের উৎপাদনের পরিমাণ, উত্তোলন, ব্যবহার, আঞ্চলিক ও বিশ্ববাণিজ্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা বাণিজ্যিক ভুগোলের আওতাভুক্ত।

৭. মৎস্য সম্পদ: পৃথিবীর বিভিন্ন মৎস্য ক্ষেত্রের অবস্থান, গড়ে ওঠার কারণ, মৎস্য ক্ষেত্রে ধৃত মৎস্যের পরিমাণ এবং এদের ব্যবহার ও বণ্টন সম্পর্কে আলোচনা করা বাণিজ্যেক ভূগোলের অন্যতম কাজ।

৮. শক্তি সম্পদ: বাণিজ্যিক ভূগোল বিশ্বের মোট উৎপাদিত শক্তি সম্পদ এবং এর বণ্টন ও ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করে অধিকতর মানব কল্যাণ সাধনের পরামর্শ প্রদান করে।

বাণিজ্যিক ভূগোলের বিষয়বস্তু আলোচনা কর

গ. মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি

জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যে সকল কার্যাবলি সম্পাদন করে তাদের সমষ্টিকে মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বলে। মানুষের অতীত ও বর্তমানের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বাণিজ্যিক ভূগোল আলোচনা করে। বর্তমানে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য এ তিনটিকে নিয়েই মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ তথা বাণিজ্যিক ভূগোলের প্রধান ক্ষেত্র রচিত। এ ক্ষেত্র তিনটি নিম্নে আলোচিত হলো-

১. উৎপাদন বণ্টন ও ব্যবহার: বিভন্ন প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদের উৎপাদন, বণ্টন ও ব্যবহার সম্বন্ধে তথ্যমূলক জ্ঞানদান করা বাণিজ্যিক ভূগোলের কাজ।

২. কৃষি: কৃষি মানুষের খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষি ও কৃষিজ উৎপাদন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।

৩. শিল্প: পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার কারণ, উৎপাদিত পণ্যদ্রব্যের পরিমাণ, শ্রমিক সরবরাহ, বাজার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।

৪. ব্যবসা-বাণিজ্য: অভ্যন্তরীণ, ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বাণিজ্যকেন্দ্র, বাণিজ্যপথ, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ, পণ্যের উৎপাদন ও বন্টন, আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতাভুক্ত।

৫. পরিবহণ ও যোগাযোগ: এটি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থল, নৌ ও আকাশ পথে যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। এছাড়া উন্নত ও অনুন্নত যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার কারণ নির্দেশও এর আওতাভুক্ত।

উপসংহার

আশাকরি, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা বাণিজ্যিক ভূগোলের আওতা বা পরিধি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। উন্নত জ্ঞানবিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিভিন্ন মুখী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার প্রভৃতি বাণিজ্যিক ভূগোলের পরিধিকে উত্তরোত্তর বিস্তৃতি দান করেছে।

Related Posts